দাজ্জাল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি পরীক্ষা হবে, যার মাধ্যমে ঈমানদারদেরকে যাচাই করা হবে, তারা আল্লাহর ওয়াদার উপর কতটুকু বিশ্বাস রাখে। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের জন্য আল্লাহ অনেক মর্যাদা ও প্রতিদান বরাদ্দ রেখেছেন। এ কারণেই দাজ্জালকে সব ধরনের উপকরণ প্রদান করা হবে।
দাজ্জাল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, তার কাছে বিপুল পরিমাণ খাদ্য উপকরণ থাকবে। সে যাকে ইচ্ছা খাদ্য দিবে, যাকে ইচ্ছা না খাইয়ে মারবে। বর্তমানে পৃথিবীতে বাৎসরিক আয়ের দিক দিয়ে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির নাম ‘নেসলে’। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদী মালিকানা এবং এদের মিশন সমগ্র পৃথিবীর খাদ্য উপকরণকে নিজেদের মুঠোয় নেওয়া।
এই কোম্পানিটি বর্তমানে খাদ্য উপকরণ, পানীয়, চকলেট, সবধরনের মিষ্টান্ন দ্রব্য, কফি, গুড়োদুধ, শিশুদের দুধ, পানি, আইসক্রিম, সবধরনের আচার ও স্যুপসহ ২৯ টি ব্র্যান্ডের খাবার। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক প্রসারতা লাভ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এরপরে প্রসারতার ধারাবাহিকতায় এটি আরও পাঁচটি বিশ্বখ্যাত বড় বড় খাবার কোম্পানিকে কিনে নেয়। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এই কোম্পানির ৮৬ টি দেশে ৪৫০ টি কারখানায় ৩,২৮,০০০ শ্রমিকসহ মোট কর্মী সংখ্যা ৩,৩৯,০০০ জন।
আর এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জগত খাদ্য পানীয়র বেলায় নেসলের উপর নির্ভরশীল। আর মুখরোচক রকমারি খাবার মানুষকে অলস বানিয়ে দেয়, শরীরকে স্থূলাকার করে ফেলে আর নানা রোগের জন্ম দেয়। অথচ পরিমিত সাধাসিধে খাবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের সুন্নত। যা আজকাল একমাত্র তাকওয়াপূর্ণ পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রেই যা মেনে চলা সম্ভব।
নু’আইম ইবনে হাম্মাদ সংকলিত ‘আলফিতান’ –এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, ‘দাজ্জালের সঙ্গে ঝোল ও এমন গোশতের পাহাড় থাকবে, যা কখনো ঠাণ্ডা হবে না’।
বর্তমান যুগে পৃথিবীতে নানা স্তর অতিক্রম করে খাদ্য ও পানীয় নিরাপদ রাখার জন্য স্বতন্ত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ‘ফুড প্রসেসিং ও প্রিসার্ভেশন’ নামে ১৮০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ১৮০৯ সালে নিকোলাস অ্যাপার্ট সর্বপ্রথম খাদ্যের প্রিসার্ভেশন পদ্ধতি আবিস্কার করে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের কাজই হল খাদ্য ও পানীয় বস্তুকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করা বিষয়ে গবেষণা করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবত বহু সংখ্যক পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলেছে। সেই পদ্ধতিগুলোর কিছু পদ্ধতি এমন, যেগুলোতে খাদ্যকে এক বিশেষ মাত্রার তাপে গরম রেখে সংরক্ষণ করা হয়। স্যুপ, আচার, সবজি, গোশত, মাছ ও ডেইরি সংক্রান্ত বস্তুসমূহ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এই যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোশতগুলো গরম হবে এবং ঠাণ্ডা হবে না’ কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ।
প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য আল্লাহপাক মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি ভূখণ্ডে সেখানকার মানুষের মেজাজ,মৌসুম ও ভৌগলিক অবস্থান হিসাবে নানা প্রকার ফলমূল ও শাকসবজি উৎপন্ন করেন। এসকল বস্তুসামগ্রী সেই দেশের নাগরিকদের মালিকানায় ছিল। নিজেদের ক্ষুধা নিবারণে তারা কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা ছিল না। নিজেদের উৎপাদিত ফসল নিজেরাই ভোগ করত। কিন্তু আল্লাহর শত্রু ইহুদী গোষ্ঠীর বিষয়টি সহ্য হল না। তারা এই সব উৎপাদনকে নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করল। ঠিক এমন, যেন এই গোষ্ঠীটি আল্লাহর অবতারিত মান্না ও সালওয়ায় সন্তুষ্ট না হয়ে অর্থব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সবজি ও ডালের আবেদন জানিয়েছিল, যাতে সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের দুষ্ট স্বভাবের প্রকাশ ঘটাতে পারে।
আর এর জন্য তারা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এর মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় এমন আদেশ জারি করিয়ে নিল, যার আওতায় প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীকে বিভিন্ন রিপোর্টে বিভিন্ন অজুহাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সাব্যস্ত করা হয়েছে। যার ফলে বিশ্ব ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী থেকে দূরে চলে গেছে ও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে আটা, ময়দা, সুজি, তেল, ঘি, দুধ, জিরা, মরিচ, হলুদ, বিভিন্ন মসলা থেকে শুরু করে রেডি হালিম, রেডি চিকেন কারী, মাটন কারী, রেডি বিরিয়ানি, রেডি খিচুরি, রেডি ক্ষীর মিক্সসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্য উপকরণ আজ বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাতকৃত। অথচ আজ থেকে ১০০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এই সকল প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী খেয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা দীর্ঘায়ু লাভ করেছেন।
তারা তথ্য প্রকাশ করল, মাটির পাত্রে খাবার খাওয়া ক্ষতিকারক। আর যায় কোথায়! অমনি মানুষ সমাজ থেকে মাটির থালা বাসন পাত্রের ব্যবহার তুলে দিল। কিন্তু মজার বিষয় হল, সেই বাসন ফাইভস্টার হোটেলে পৌঁছে গেল আর বলা হল, এগুলোতে খাওয়ার মজাই আলাদা।
তাই বর্তমানে মুসলমান ডাক্তারদের কর্তব্য হল, আপনারা জাতিকে সে সকল অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেন, আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে জাতি আজ যার শিকার। যদিও বর্তমানে সময়টি এমন যে, সত্য বললে আগুন আর মিথ্যার সামনে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তবুও কারও যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকে যে, দাজ্জালের সময়টিতে যেটি আগুন হিসাবে পরিদৃশ্য হবে, সেটিই মূলত শীতল পানি হবে, তা হলে মুসলমান ডাক্তারদের সেই পথটিই অবলম্বন করা দরকার, যেটি তাদের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হবে। আমাদেরকে সব সময়ের জন্য স্মরণ রাখতে হবে, সত্য বলার অপরাধে যে আগুন বর্ষিত হয়, এগুলোই আসলে ফুলবাগান। আর মিথ্যার সামনে মাথানত করার ফলে যে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, এগুলোই মূলত আগুন।
No comments:
Post a Comment