দাজ্জালের চোখ সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা এসেছে। কোথাও তার ডান চোখ কানা বলা হয়েছে। কোথাও বাম চোখ। এ বিষয়ে মুফতি মুহাম্মদ রফী’ উসমানী সাহেব ‘আলামতে কেয়ামাত ওয়া নুযূলে মাসিহ’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, “সার কথা হল, দাজ্জালের দুই চোখই ত্রুটিপূর্ণ হবে। বায়েরটি একদম জ্যোতিহীন ও মোছানো আর ডানেরটি কোঠর থেকে বের হওয়া থাকবে আঙ্গুরের মতো।
হাফিজ ইবনে হাজর আসকালানি (রহঃ) ‘তাফিয়া’র ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, দাজ্জালের ডান চোখটি বাইরে বের হওয়া থাকবে। (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১৩, পৃষ্ঠা ৩২৫)
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দাজ্জালের চোখ সিসার মতো সবুজ হবে।” (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২১১৮৪; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং ৬৭৯৫)
বর্তমান যুগে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানির লোগোতে আপনি একটি চোখ দেখতে পাবেন। কোথাও চোখটি শাদা, যেন চমকানো তারকা। আবার কোথাও চোখটির রং সবুজ দেখানো হয়, যেন সবুজ সিসা। আর এই ওয়ান আই সিম্বল যাকে “All Seeing Eye” সিম্বল বলা হয়, এই সিম্বল কোম্পানির লোগোতে ব্যাবহার করা হচ্ছে এমন কোম্পানির সংখ্যা নেহায়েত কম না বরং তার সংখ্যা সত্যিই অবাক করা। দাজ্জালের নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার বা নতুন বিশ্ব ব্যাবস্থা মানুষের মন মগজে ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের অজান্তেই কালচারিং করার জন্য (যাতে মানুষকে এই বিশ্ব ব্যাবস্থার জন্য প্রস্তুত করা যায়) দাজ্জালের অনুসারীরা তাদের একটি সিম্বল “All Seeing Eye” কত বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দিয়েছে তা বুঝার জন্য নিচে অসংখ্য ছবি থেকে বাছাই করা কিছু ছবি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে দেখানো হল।বিখ্যাত র্যাপার এমিনেম এর স্পেশাল পোজ, আপাতত দৃষ্টিতে একে “স্টাইলিশ”(যাকে অনেকে মজা করে ইয়ো ইয়ো পোজ ও বলে )পোজ মনে হলেও এখানে দুটো সাইন আছে, একটি হল “All Seeing Eye” এবং আরেকটি “The Devil’s Horn (El Diablo)”। মুসলিম তরুন ও যুবকদের মধ্যে এর অন্ধ অনুকরণ দেখা যায়।
তবে এবার আপনারা যে ছবি দুটো দেখতে যাচ্ছেন তা দেখার পর অনেকেই হতভম্ব হয়ে যাবেন। যে ভুখন্ডে রয়েছে আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফ, যে পবিত্র ভুখন্ডে শুয়ে আছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সেখানকার অর্থাৎ সৌদি আরবের পুলিশের ব্যাজও এই দাজ্জালিক সিম্বল থেকে বাদ যায় নি।এটি কি নিছক কাকতলীয় ঘটনা যে, এই কোম্পানিগুলো একটি ত্রুটিপূর্ণ চোখকে তাদের কোম্পানির মনোগ্রাম হিসাবে বেছে নিয়েছে? নাকি বুঝে শুনে এখন থেকেই তারা জনগণকে এই ত্রুটিপূর্ণ চোখটির সঙ্গে পরিচিত করে তুলছে?
আলোচ্য হাদিসে আছে, দাজ্জালের কপালে ‘কাফিরুন’ লিখা থাকবে। এখানে কথাটির প্রকৃত অর্থই উদ্দেশ্য। কাজেই এই দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয় যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য কোন কোম্পানির নাম কিংবা কোন রাষ্ট্রের পতাকা।
ইমাম নববি মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থে লিখেছেন, বিজ্ঞ আলেমগনের মতে সঠিক হল, উল্লেখিত লিখাটি বাস্তব। আল্লাহপাক একে দাজ্জালের মিথ্যাবাদী হওয়ার অকাট্য চিহ্ন হিসাবে স্থির করেছেন।
প্রতিজন মুমিন এই লেখাটি পড়তে পারবে। প্রশ্ন জাগে, সবাই যখন পড়তে পারবে, তখন মানুষ তার ফেতনায় আক্রান্ত হবে কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর হল, সেই হাদিস, যাতে বলা হয়েছে, পরিচয় পাওয়া সত্বেও বহু মানুষ আপন জাগতিক স্বার্থের খাতিরে দাজ্জালের সঙ্গ দিবে।
আরেকটি উত্তর এই হতে পারে যে, পড়তে পারা আর লেখার মর্ম বুঝে সেই অনুযায়ী কাজ করা এক কথা নয়। বর্তমান যুগেও বহু মুসলমান এমন আছে, যারা কুরআনের বিধানাবলী পড়ে, কিন্তু সেই অনুযায়ী আমল করে না। জানে, কিন্তু মানে না। সবাই জানে, সুদি ব্যবস্থা সরাসরি আল্লাহর সাথে যুদ্ধ। কিন্তু বহু মানুষ কার্যত সুদের সাথে জড়িত।
দাজ্জালের যুগেও বহু মানুষ মুদ্রা ও জাগতিক সৌন্দর্যের বিনিময়ে নিজের ঈমান বিক্রি করে ফেলবে। তারা ঈমান পরিত্যাগ করে দুনিয়াকে বরণ করে নেবে। কাজেই যারা আল্লাহর নামে জীবন বিলানোর পরিবর্তে দাজ্জালের সম্মুখে মাথানত করে ফেলবে, তারা দাজ্জালের কপালের ‘কাফিরুন’ লিখাটি দেখতে পাবে না। বরং তাকে তারা ‘যুগের মাসিহ’ ও ‘মানবতার মুক্তির সনদ’ আখ্যা দেবে এবং এর পক্ষে যুক্তি প্রমাণ খুঁজে বেড়াবে। যারা দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, তাদেরকে তারা বিভ্রান্ত বলবে। তারপরও নিজেদের ব্যাপারে দাবি করবে, আমরা মুসলমান। অথচ ইসলামের সঙ্গে তাদের কোনোই সম্পর্ক থাকবে না। এসব এ জন্যই হবে যে, বদ আমল ও আত্মিক ব্যাধির কারণে তাদের ঈমানি শক্তি রহিত হয়ে যাবে।
এই উত্তর আমি নিজের পক্ষ থেকে দিচ্ছি না। এটি আমার মন গড়া কথা নয়। বরং বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববি (রহঃ) এই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
হাফিজ ইবনে হাজর (রহঃ) ফাতহুল বারীতে লিখেছেনঃ “সেদিন আল্লাহ লেখাপড়া জানা ব্যতিরেকেই মুমিনদের জন্য বুঝ তৈরি করে দিবেন।”
ইমাম নববি লিখেছেনঃ “সেদিন আল্লাহ মুমিনদের জন্য উক্ত লেখাটি প্রকাশ করে দেবেন আর বদকার লোকদের জন্য গোপন করে রাখবেন।”
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত
অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিক...
-
আর্টিকেল ইনডেক্স – দাজ্জালের আলোচনাঃ উম্মতের জন্য একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি দাজ্জালের ফ...
-
কাফেররা মুসলমানদেরকে যে দৃষ্টিভঙ্গির দিকেই নিতে চায়, সারা বিশ্ব ওদিকেই দৌড়ে যেতে শুরু করে। সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ কোন প্রকার লাভ লোকসান ...
-
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,...
No comments:
Post a Comment