Friday, 19 July 2019

দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত

অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিকের ঘোষণা প্রচার করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানকে একটি বিষয় বুঝে নেওয়া আবশ্যক যে, পরীক্ষার এই হলটি অতিক্রম করা ব্যতীত জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
“তোমরা কি মনে করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনও আল্লাহ জেনে নেননি যে, তোমাদের কে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করেছে আর কারা দৃঢ়পদ।” (সূরা আল ইমরান : ১৪২)
এটি আল্লাহ পাকের বিধান। আল্লাহর বিধান কখনও পরিবর্তন হয় না। আপনি হযরত মাহদী ও দাজ্জাল বিষয়ক হাদিসগুলো পড়েছেন। সবগুলো হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে, হযরত মাহদী ও ঈসা (আঃ) এর আগমনের উদ্দেশ্য যুদ্ধ। আবির্ভূত হয়েই তারা কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিবেন। এ কারণে প্রত্যেক মুসলমানকে আপন আপন ঈমানের ভাবনা ভাবা দরকার। নিজের ঈমানকে রক্ষা করার জন্য অন্তরে যুদ্ধের চেতনা ও শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করা দরকার। মুনাফিকদের জন্য একাজটি অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহ পাক বলেনঃ
“তারা (মুনাফিকরা) যদি বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে অবশ্যই তারা এ কাজের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করত।” (সূরা তাওবা : ৪৬)
যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলমানদের ধোঁকা দিতে ইবলিসি শক্তিগুলো মিথ্যা মাহাদিকে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারে আর সত্যিকার মাহদীকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। কাজেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মাহদীর যেসব আলামত বর্ণনা করেছেন, সেগুলোকে সামনে রেখে ঘটনার বাস্তবতা বুঝবার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলো অনুসরণ করে চললে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
১। দাজ্জালের যুগে বাস্তবতা ততটা হবে না, যতটা চলবে গুজব ও অপপ্রচার। এই প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হবে আধুনিক প্রচার মাধ্যম। যেমন – পত্রিকা, রেডিও, টিভি, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি। কাজেই এই আধুনিক কমিউনিকেশন ও অন্যান্য সুবিধা থেকে নিজেকে যতসম্ভব মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে বরং এখন থেকেই এমন অভ্যাস গড়ে তুলুন যে, কাল যদি আপনি এসব প্রযুক্তি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন, তা হলে এসব পরিত্যাগ করতে যেন আপনাকে কোন সমস্যায় নিপাতিত হতে না হয়। কাজেই এসব আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা যত কমানো যায়, আপনার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ততই কল্যাণকর প্রমাণিত হবে।
২। দাজ্জালি মিডিয়া যারা পড়ে ও শোনে, তারা সাধারণত নিজের মাথায় চিন্তা করে না। বরং ওসব মিডিয়ার সংবাদ, ছবি ও পর্যালোচনাই তাদের মন-মস্তিস্কের উপর পুরোপুরি ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। তাই ওসব প্রচার মাধ্যম থেকে যথাসম্ভব নিরাপদ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৩। এ যুগে দাজ্জালি শক্তিগুলো ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে এত বেশি প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এই অপপ্রচারের জোরে সত্য চাপা পড়ে থাকে। এজন্য পশ্চিমা মিডিয়ার সূত্রে যদি আপনার কানে যদি কোন সংবাদ আসে, তা হলে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সংবাদটি অন্য কানে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এই পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি দাজ্জালি শক্তিগুলোর অপপ্রচারের ক্রিয়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত নাও যদি হতে পারেন, অন্তত তার শক্তি তো অবশ্যই দুর্বল করে দিতে সক্ষম হবেন। পবিত্র কুরআন কাফেরদের এই প্রচেষ্টার কথা এভাবে বর্ণনা করেছেঃ
“তোমরা যখন সংবাদটি শুনেছ, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা নিজেদের ব্যাপারে সু ধারনা করল না কেন? আর কেন এ কথা বলল না যে, এটি তো সুস্পষ্ট এক অপবাদ?” (আন নূরঃ ১২)
অপর এক আয়াতে শোনা সংবাদ পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে মুখ থেকে বের করারও নিন্দা করা হয়েছে।
৪। যখন কোন বিষয়কে দাজ্জালি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে সন্দিগ্ধ বানিয়ে দেওয়া হবে এবং বিষয়টি ঠিক, না ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে, তখন আধুনিক বস্তুগত উপকরণের মাধ্যমে তথ্য জানার পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করবেন। কেননা, পরিস্থিতিকে যারা দাজ্জালের চোখে দেখে আর যারা আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে, উভয়ে সমান হতে পারে না। যেমন – পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
“আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তার রবের আলোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। এই ব্যক্তি অন্যদের মতো হতে পারে না।” (সূরা জুমারঃ ২২)
বর্তমান যুগের একাধিক ঘটনা প্রমাণিত করে দিয়েছে, যাদের তথ্য জানার একমাত্র উপায় প্রচারমাধ্যম, তারা সত্যের সন্ধান পায় না। বরং তারা যে সব সংবাদ বিশ্লেষণ পড়ে ও শোনে, তাই তাদের দৃষ্টিতে সত্যে পরিণত হয়ে যায়। এভাবে তারা আল্লাহর বাহিনীর পরিবর্তে ইবলিসের বাহিনীকে শক্তি যোগাচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষিতজনদের বিশ্লেষণ এমন হয়ে থাকে যে, তাদের বিবেকের জন্য আক্ষেপ করা ব্যতীত কোন উপায় থাকে না।
৫। হৃদয়ের স্ক্রিনটিকে ওয়াশ করে নিন। বিবেকবান মুসলমান ভাই ও বোনেরা যখন পশ্চিমা মিডিয়ার স্বরূপ বুঝে ফেলবে এবং তাদের টিভি ও কম্পিউটারের স্ক্রিনের ঘটনাচিত্র মনে সংশয় তৈরি করতে শুরু করবে, তখন ডানে বাঁয়ে না দেখে নিজের বক্ষে স্থাপিত ক্ষুদ্র স্ক্রিনটিকে ওয়াশ করে নেওয়াটাই অধিকতর উত্তম হবে। তারপর দেখবেন, পরিষ্কার হওয়ার পর এই ক্ষুদ্র স্ক্রিনটি আপনাকে এমন দৃশ্যাবলী দেখাতে শুরু করবে, যা আপনি গোটা জীবন আধুনিক-থেকে-আধুনিকতর প্রযুক্তি ব্যবহার করেও দেখতে পারতেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
“ওহে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ‘ফুরকান’ দান করবেন।” (সূরা আনফালঃ ২৯)
এই ‘ফুরকান’ ই সেই স্ক্রিন, যার পর্দায় সাধারণ চোখে দেখা যায় না এমন সব বিষয়ও পরিদৃশ্য হতে শুরু করে। মালায়ে আ’লা তথা খোদায়ী শক্তির সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক জুড়ে যায়, যেখানে জগতের ব্যবস্থাপনামূলক বিষয়াদি চূড়ান্ত হয় এবং আল্লাহর তাজাল্লি নিপাতিত হয়। মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে দূর দৃষ্টি দান করেন। অবশেষে বান্দা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখতে শুরু করে।
৬। দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা কাহাফের প্রথম দিককার আয়াতগুলো পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আপনি এই আয়াতগুলো মর্ম বুঝে পাঠ করুন। দেখতে পাবেন, এই আয়াতগুলোতে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।
(ক) আল্লাহর হামদ ও ছানার পর কুরআনুল কারীম সত্য নবীর উপর নাজিল হওয়া।
“সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তার বান্দার উপর কিতাব নাজিল করেছেন…”
(খ) আল্লাহর নাফরমান বান্দাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সংঘটিতব্য অতিশয় কঠিন ও কষ্টদায়ক শাস্তির ভয় দেখানো।
“যাতে কঠিন শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে পারে”।
(গ) সকল অবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যকারীদেরকে অনন্ত জীবনের সুখ ও শান্তির সুসংবাদ।
“আর তিনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ শোনাবেন, যারা ……”
(ঘ) সেই লোকদেরও লোকদেরও কঠিন পরিণতির ভয় দেখানো, যারা আল্লাহ পুত্রসন্তান গ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস পোষণ করে।
“আর ভয় দেখাবেন তাদেরকে, যারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।”
(ঙ) দুনিয়ার জাঁকজমককে ভঙ্গুর আখ্যায়িত করে দুনিয়াবিমুখতা ও তাকওয়া অম্বলনের উৎসাহ দান।
“তার উপর যা কিছু আছে, তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করব।”
(চ) আসহাবে কাহাফের ঘটনা বর্ণনা করে তার চেয়েও বড় ঘটনা শোনার জন্য মস্তিস্ক প্রস্তুত করা।
“তুমি কি মনে কর,গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নির্দেশনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর?”
(ছ) আসহাবে কাহফের দু’আঃ
“হে আমাদের রব,তুমি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা কর।”
এই দু’আর মধ্যে সত্য সন্দিহান হয়ে পড়লে তখন আল্লাহর সমীপে দুটি বস্তু প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
একঃ হে আমাদের রব,আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে দৃঢ়তা দান করুন।
দুইঃ আমাদের বিষয়-আশয়ে, যেমন – বাতিলের বিরোধিতা ও সত্যের অনুসরণ এসব কাজে আমাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করুন।
এই আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলওয়াত করে এগুলোর মর্ম উপলব্ধি করে সে মোতাবেক আমল করুন। আয়াতগুলোকে মুখস্ত করে নিলে অনেক সুবিধা হবে।
৭। তাকওয়া অবলম্বন করুন। তাকওয়ার মূল হল হালাল জীবিকা। তাই হারাম পরিহার করে চলুন। এমনকি সংশয়পূর্ণ বস্তু থেকেও দূরে থাকুন। বর্তমান যুগে তাকওয়া অবলম্বন করা খুবই জরুরী। নিজেকে সেইসব আমলের পাবন্দ বানিয়ে রাখুন,যার ফলে আল্লাহর রহমত বান্দাকে সব সময় আচ্ছাদন করে রাখে। যেমন – সব সময় অজু সহকারে থাকা, নামাজ শেষ করার পর কিছু সময় জায়নামাজে বসে থাকা,তাহাজ্জুদ পড়া,বিশেষ করে যেসব লোক দ্বীনি কোন কাজে দায়িত্বরত আছেন,তাদের জন্য তো তাহাজ্জুদ নামাজ খুবই জরুরী আমল।
৮। আল্লাহর সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে নিয়মিত তরমজা ও তাফসীরের সঙ্গে পবিত্র কুরআন পাঠ করুন আর নিজের অন্তরকে আলোকিত রাখতে ও সত্যের কাফেলায় শামিল থাকতে সত্যাশ্রয়ী আলেমগনের সাহচর্য অবলম্বন করুন এবং সব সময় সত্যপন্থীদের পথ অনুসরণ করুন।
৯। দ্বীনের চর্চায় মসজিদগুলোর ভূমিকা সক্রিয় করুন। বিশ্ব কুফরি প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রচেষ্টায় রত আছে যে, মুসলমানদের জীবন থেকে মসজিদের ভুমিকাকে নিঃশেষ করে দেওয়া হবে। এই লক্ষ্যেই তারা আলেমসমাজ ও ধার্মিক শ্রেণীর লোকদেরকে নানা পন্থায় বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মোকাবিলায় প্রতিটি মসজিদে কুরআনের দরস চালু করুন।
১০। যেমনটি উপরে বলা হয়েছে যে,হযরত মাহদীর আমলে যা কিছু সংঘটিত হবে,পূর্ব থেকেই সেসবের আগাম প্রস্তুতি ঈমানের চিহ্ন বলে বিবেচিত হবে। যেমন – নিজেকে গরম ও ঠাণ্ডায় অভ্যস্ত বনানো,লাগাতার কয়েকদিন পর্যন্ত ক্ষুধা পিপাসা সহ্য করা,পাহাড়ে চলাচলের সাহস ও অভ্যাস করা,পাহাড়ি জীবনের সাথে নিজের স্বভাব চরিত্রকে খাপ খাইয়ে নেওয়া,ঘোরতর যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া,নিজের মধ্যে ও পরিবার পরিজনকেও আল্লাহর পথে কুরবানি দেওয়ার লক্ষ্যে এখনই প্রস্তুত করতে থাকা ইত্যাদি।
কবির ভাষায়ঃ
“আমি যখন বলি আমি মুসলমান,তখন আমি শিউরে উঠি;
কারণ,আমি জানি,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবী পূরণ করা কত কঠিন।”

Thursday, 18 July 2019

আর্টিকেল ইনডেক্স – দাজ্জালঃ কালো পতাকার চূড়ান্ত শত্রু

আর্টিকেল ইনডেক্স –


দাজ্জালের আলোচনাঃ উম্মতের জন্য একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি


দাজ্জালের ফেতনা হাদিসের আলোকে 

দাজ্জালের গঠন-প্রকৃতি

—–দাজ্জালের উভয় চোখ ত্রুটিপূর্ণ হবে


দাজ্জালের বাহন ও তার গতি

—– দাজ্জালের অর্থনৈতিক প্যাকেজ

—– দাজ্জালের ধোঁকা ও প্রতারণা

—– দাজ্জালের অবস্থানে সময় থেমে যাবে কি?

—– দাজ্জালের ফেতনা অনেক বিস্তৃত হবে

—– দাজ্জালের সামনে সন্তান হল পরীক্ষা

—– দাজ্জালের দুনিয়াতে অবস্থানকাল ও নিজেকে রব প্রমাণে যুবককে হত্যা ও জীবিত করা


দাজ্জাল হিসাবে ইবনে সায়্যাদকে সন্দেহ 


—– ইবনে সায়্যাদ কি দাজ্জাল ছিল?

দাজ্জালের আগে পৃথিবীর অবস্থা   

দাজ্জাল কখন আত্মপ্রকাশ করবে? 

দাজ্জাল কোথা থেকে আত্ম প্রকাশ করবে? 

—– দাজ্জাল বিষয়ে ইরাক সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর বর্ণনা

—– দাজ্জালের সাথে হযরত তামীমদারি (রাঃ) এর সাক্ষাত

দাজ্জাল মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করবে না



দাজ্জালকে জয়ী করার লক্ষ্যে মাহদি বিরোধী সম্ভাব্য ইবলিসি চক্রান্তসমূহ

দাজ্জাল ও মিডিয়াযুদ্ধ

নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার (New World Order) নাকি দাজ্জালের আগমনের পূর্ব প্রস্তুতি

দাজ্জালের জন্য অপেক্ষামান শয়তানপূজারী (Satanist) ও জাদুবিদ্যার রুপকারগণ


বোহেমিয়ান ক্লাবঃ শয়তানের পূজারীদের গোপন সংস্থা


জাদু বিদ্যার বর্তমান স্বরূপ




রায়েলিজম



দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের কার্যক্রম বুঝতে অন্তর চক্ষুর প্রয়োজনীয়তা




‘বিশ্বভ্রাতৃত্ব’, ‘বিশ্বনিরাপত্তা’ ও ‘জাতিগত বন্ধুত্ব’ – শব্দের আড়ালে দাজ্জালি ষড়যন্ত্র

—– স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দাজ্জালি চক্রান্ত

—– দাজ্জাল ও খাদ্য উপকরণ

—– বানিজ্যখাত নিয়ে দাজ্জালি চক্রান্ত

—– দাজ্জাল ও সম্পদ কুক্ষিগতকরণ

—– নারী জাতির জন্য দাজ্জালি শক্তির জাল




—– ইমাম মাহদির আগমনের দিনটিকে দাজ্জালি মিডিয়া কেমনভাবে বিশ্বে সংবাদ হিসাবে প্রচার করবে?

দাজ্জালের মহাযুদ্ধ ও তাকে হত্যা

—– দাজ্জাল ও পানি নিয়ে যুদ্ধ

—– ইমাম মেহেদী ও ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে যুদ্ধগুলো কি শুধু তরবারি দ্বারাই লড়া হবে?


দাজ্জালি ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় মুমিনদের দায়িত্ব

দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত  

দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্ব

হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে,সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ”।
(সু’আবুল ইমান খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মু’জামুল কাবীর খণ্ড ৮,পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৮৭)
অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে,সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহ পাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা,যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই ইসলামী শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
মোটকথা,মুসলমানের জীবন থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন,সেটি হল খেলাফত।
যদি খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের (১৯২৪ সাল) এর পর থেকে এ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতা সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদের ঘরগুলোরই মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘরগুলোই মুসলিম সমাজকে এই পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। বহু মুসলিম ভূখণ্ডে এমনও ঘটেছে যে, এই সর্বশেষ দুর্গটি ছাড়া মুসলমানদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গগুলোতে অবস্থানরত ইসলামী বাহিনীগুলো সাহস হারায়নি এবং নিজ নিজ রণাঙ্গনে দৃঢ়পদে টিকে রয়েছে।
ইসলামের এই দুর্গগুলোতে যে বাহিনী আছে, তারা হল মুসলিম নারীদের বাহিনী, যারা ইসলামের জন্য সেই মহান কীর্তি আঞ্জাম দিয়েছে, যা ইসলামবিরোধীদের হাজার প্রচেষ্টার পর আজও অটুট রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জাতি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ঈমানদার মা ও বোনদেরকে এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতনতা, সাহসিকতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা আপনার মোকাবেলায় একনাগাড়ে ৯০ বছর যাবত পরাজয় বরণ করে আসছে। এসব পরাজয় থেকে তারা এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে যে, মোকাবেলা করে এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না – আমাদেরকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবার তারা যে কৌশলটি অবলম্বন করেছে, তা হল মুসলমানদের ঘরগুলোতে যে ইসলামী বাহিনীটি অবস্থান নিয়ে আছে, তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে দিতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো মনোমুগ্ধকর শ্লোগান নিয়ে দরদী বন্ধুর রূপ ধারণ করে তারা আপনার সামনে এসে হাজির হয়েছে।
কাজেই আমার মা ও বোনেরা! সময়ের নাজুকতা ও শত্রুপক্ষের ধোঁকা-প্রতারনা উপলব্ধি করে আপনাদেরকে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে উদাসীন হবেন না। মুসলমান পুরুষদের বাহিনী, যারা আপন দায়িত্ব থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যারা মানসিকভাবে পরাজয়ের শিকার হয়ে আছে, হতাশার কালো মেঘ যাদের ঘিরে রেখেছে, আপনারা মহিলাদেরকে আল্লাহ এই যোগ্যতা দান করেছেন যে, আপনারা পলায়মান এই বাহিনীটিকে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেন, তাদের অবশ বাহুগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করে দিতে পারেন, ভীত সন্ত্রস্ত পুরুষদের মাঝে আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তাদেরকে কর্তব্য পালনের উপযোগী বানিয়ে তুলতে পারেন।
মহান আল্লাহ আপনাদেরকে সত্তাগতভাবেই একটি সংগঠন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একজন নারী মানেই একটি সংগঠন। এ কারণে দাজ্জালের ফেতনার বিরুদ্ধে আপনারা অনেক বেশি কাজ করতে পারেন।
সন্তানদেরকে খাঁটি মুসলমান বানানো এবং তাদেরকে সর্বাবস্থায় ইসলামী নিতি-আদর্শের প্রহরী হিসাবে গড়ে তোলা মহিলাদেরই দায়িত্ব। সন্তানদের মন মস্তিস্ককে শৈশব থেকেই এ কথাটি বসিয়ে দিতে হবে যে, তার ঈমান জগতের প্রতিটি বস্তুর চেয়ে মূল্যবান। কাজেই ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি সমগ্র দুনিয়াকেও কুরবান দিতে হয়, তাহলে অকুণ্ঠচিত্তে তা করতে হবে। তবুও ঈমানের গাঁয়ে আঁচড়টিও লাগতে দেওয়া যাবে না।
হযরত ইমরান ইবনে সুলাইম কালায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “একজন নারীর নিজ গৃহের মাঝে ছুটে বেড়ানো তার জন্য জুতাজোড়া অপেক্ষা উত্তম। স্থুলাকায়া নারীদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। সুসংবাদ গরীব মহিলাদের জন্য। তোমরা তোমাদের নারীদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করাও আর তাদেরকে তাদের ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করার প্রশিক্ষন দাও। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে তারা এই কাজটি করতে বাধ্য হতে পারে।” (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫১)
এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদেরকে আরাম প্রিয় না হওয়া উচিৎ। বরং তাদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করে নিজ ঘরে হাঁটা চলা করে জীবন অতিবাহিত করায় অভ্যস্ত হতে হবে, যাতে শরীরটা ক্ষীণ থাকে। কারণ, তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আগমন করতে পারে যে, তখন নিজের সম্ভ্রম ও ঈমান বাঁচানোর তাগিদে তাদেরকে পাহাড়-বনে-জঙ্গলে পায়ে হেঁটে সফর করতে হবে। যেমনটি আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়ায় ঘটছে।
তাই কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে আমল করুন এবং গোটা পরিবার ও বংশের লোকদের মাঝে যথারীতি ঈমানের অভিযান পরিচালনা করুন। দাজ্জালের মহা ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজেও সজাগ সচেতন থাকুন, অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলুন।
স্মরণ করুন ইরাকের সেই অসহায় মায়েদের, ফিলিস্তিনের সেই বোনদের, যাদের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই তাদের সোহাগ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে।
স্মরণ করুন, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের সে কন্যাদের, যারা জীবনের প্রতিটি পলক ও প্রতিটি মুহূর্ত বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে থাকে।
স্মরণ করুন, সিরিয়ার সেই নিস্পাপ শিশুদের, যারা খোলা আকাশের নিচে মা! মা! করে চিৎকার করছে, কিন্তু তাদের মায়েদের ইমাম মাহদীর আগমনপূর্ব আলামত বহনকারী নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বনু কাল্ব গোত্রের জালেমরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের মা ও বোনদের ভুলে গেলে চলবে না, যে দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের (ভারতীয় উপমহাদেশের) মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন,আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।” (আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি হাদিস শরীফে বর্ণিত সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”,যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে,আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “সমুদ্রের শহীদান (খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে), আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান (খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে) ও দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ।” (আল ফিতান,খণ্ড ২,পৃষ্ঠা ৪৯৩)
এসব যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে এক বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, “উক্ত যুদ্ধে যে এক তৃতীয়াংশ লোক শহীদ হবে, তাদের এক একজন বদরি শহীদদের দশজনের সমান হবে। বদরের শহীদদের একজন সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে। পক্ষান্তরে এই ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর একজন শহীদ সাতশো ব্যক্তির সুপারিশের অধিকার লাভ করবে।” (আল ফিতান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪১৯)
তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শানগত মর্যাদা। অন্যথায় মোটের উপর বদরি শহীদদের মর্যাদা ইতিহাসের সকল শহীদের মাঝে সবচেয়ে উঁচু।
আমাদের মা ও বোনদের বুঝার সুবিধার্থে এখানে হাদিস শরীফে বর্ণিত “গাজওয়াতুল হিন্দ” সম্পর্কে আসা ৫ টি হাদিস-ই বর্ণনা করছি।
(১) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর প্রথম হাদিস
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব।” (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)
(২) হযরত সা্ওবান (রাঃ) এর হাদিস
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজাদকৃত গোলাম হযরত সা্ওবান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে।” (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)
(৩) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর দ্বিতীয় হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,“অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে,আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন,আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন) এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে।”
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম,তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম;যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত। ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম,আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী।”
বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ “খুব কঠিন,খুব কঠিন।” (আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯)
(৪) হযরত কা’ব (রাঃ) এর হাদিস
এটা হযরত কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেনঃ “জেরুসালেমের (বাই’ত-উল-মুক্বাদ্দাস) একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন,যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দিবে,এর অর্থ-ভান্ডার ভোগদখল করবে,তারপর রাজা এসব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে,দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে,তার সৈন্যসামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে,এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে যতক্ষন না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে।” (ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তায নাঈম বিন হাম্মাদ (রঃ) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে । এতে সেই উদ্ধৃতিকারীর নাম উল্লেখ নেই যিনি কা’ব (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)।
(৫) হযরত সাফওয়ান বিন উমরু (রাঃ)
তিনি বলেন কিছু লোক তাকে বলেছেন যে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মাহর একদল লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে,আল্লাহ্ তাদের সফলতা দান করবেন,এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে। আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়া ফিরে যাবে,তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আঃ) এর সাক্ষাত লাভ করবেন।” (আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১০)
এখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বর্ণিত তৎকালীন হিন্দুস্তানের সীমারেখা বর্তমান ভারত,নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে।
বর্তমানে এই উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সমসাময়িক সময়ে যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খেলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।
তাই, দ্বীনের উপর দৃঢ়পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাওয়া দায়িত্ব আমাদের মা বোনদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

সামাজিক ক্ষেত্রে দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম পুরুষদের দায়িত্ব

সাধারণত পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় যে, তারা নিজেরা তো ঠিকই নামাজ রোজা ইত্যাদি সঠিকরূপে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং জান্নাত অর্জনের জন্য পুণ্যের কাজে সময় লাগিয়ে থাকে। কিন্তু নিজের সন্তান, বোন এবং মেয়েদের ব্যাপারে এতটুকু চিন্তা করেন না। যার ফলে, তাদের এবং আত্মীয়স্বজনদের ধর্মীয় জীবনযাপনে বিস্তর অমনোযোগী দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে পুরুষগণ এ অলসতায় মনযোগ না দেওয়ার ফলে পরবর্তীতে তা আস্তে আস্তে প্রশস্ত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে এমন এক সময় এসে উপস্থিত হয় যে, সে তার স্ত্রী সন্তানকে একটি হারাম বস্তু থেকে নিষেধ করতে থাকলেও স্ত্রী সন্তান এটাকে যুগের ফ্যাশন বলে কোমর বেধে তা ব্যবহার করতে থাকে।
সুতরাং পুরুষদের উচিত – তাদের নিজেদের আখেরাত নিয়ে ফিকিরের পাশাপাশি পরিবার পরিজনকেও আগত সম্মুখ ঝড় থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থাপনা তৈরি করে। তাদের কাছে সময় দিয়ে তাদের দ্বীনী শিক্ষা দীক্ষায় প্রতিপালন করেন। সামনের ভয়ানক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন।
এটা ভেবে বসে পড়বেন না যে, আমি তো একা। আমার কথা কে শুনবে আর কে মানবে। এমনটি কখনও ভাববেন না। আপনি যখনই উম্মতের দরদ নিয়ে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে কোন পদক্ষেপ নিবেন, তখন আল্লাহ পাকও আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে সাহায্য করবেন। ফলশ্রুতিতে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না – যে কাজটি আপনি একা শুরু করেছিলেন, এখন তা লাখো মুসলমানের কন্ঠ এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কোন ময়দানে সাহস হারিয়ে ফেলা, নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং মন ভেঙ্গে দেয়া হকের রাস্তায় কখনও বাধা হতে পারে না। এটা তো এমন পথ, যার মধ্যে শুধু অটল থাকাটাই সফলতার লক্ষণ, রাস্তা তো এমনিতেই তৈরি হতে থাকে।

দাজ্জালি শক্তির মিডিয়া যুদ্ধ ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব

যেমনটি বলা হয়েছে, দাজ্জালের ফেতনায় বাস্তবতার চেয়ে মিথ্যা ও প্রতারণা বেশি থাকবে এবং সেই মিথ্যা-প্রতারনাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার উপায় হবে মিডিয়া। তাই যে সব সাংবাদিক নিজেদেরকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত মনে করেন এবং নিজেদেরকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখতে ইচ্ছা করেন, তারা সর্বাবস্থায় দাজ্জালি শক্তিগুলোর মিথ্যা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজেদের কলম ও জবানকে ব্যবহার করুন। সারা বিশ্বের কুফরি মিডিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে বিষ উদগীরন করছে এবং নিজেদের ভুল ব্যবস্থাপনাকে শান্তি ও সুবিচারের আয়োজন হিসাবে প্রমাণিত করতে চাচ্ছে। এমতাবস্থায় মুসলমান সাংবাদিক ভাইয়েরা কি শুধু এই অজুহাতে আপন ধর্মের উপহাস-মশকারা সহ্য করে নিতে পারে যে, আমি যদি ইসলামের পক্ষে লিখি, তাহলে আমার চাকরি চলে যাবে? এর অর্থ কি এই নয় যে, দাজ্জাল এসে বলবে, আমার কথা মেনে নাও; আমার কথা মেনে নাও; অন্যথায় তোমার রিজিক কেড়ে নেওয়া হবে?
এটি কোন সংগঠনের যুদ্ধ নয়। না কোন রাষ্ট্রের, না বিশেষ কোন গোষ্ঠীর। বরং এটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত ও ইবলিসের গোলামদের মধ্যকার লড়াই। বিশেষ কোন বিভাগে নয় – এই যুদ্ধ চলছে মানবজীবনের সব কটি অঙ্গনে। তাই ইবলিসের গোলামরা সেই কাজগুলোই করছে, যেগুলো তারা জীবনভর করে আসছে। কিন্তু মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত কা’ব ইবনে আশরাফের উত্তরসূরিদেরকে আপন নবীর দ্বীন-ধর্ম নিয়ে তামাশা করতে দেখে কিভাবে নীরব থাকবে?
নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচার-মাধ্যমের গুরুত্বকে কখনো অবহেলা করেননি, বরং মিডিয়াযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সে যুগের প্রচলিত প্রচার মাধ্যমকে সময় ও সুযোগ মতো পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ইসলামপূর্ব যুগে কাবার দেয়ালকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কাফেররা বিভিন্ন কুৎসামূলক কথা রটনা করত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রাসূলের কবি’ খ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রা.)কে বলতেন, ‘হে হাস্সান! আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জবাব দাও। আল্লাহ রূহুল কুদস (জিবরাইল) দ্বারা তোমাকে সাহায্য করবেন।’ নির্দেশ পালনার্থে হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রা.) নিজের ইলহামী কাসীদার সাহায্যে কাফের-মুশরিক ও ইসলামের শত্রুদের এমন দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন যে, তাদের কয়েক পুরুষ পর্যন্ত তারা একথা ভুলতে পারত না।
এক বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করেছিলেন, যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে জবাব দিতেন।
একবার আরবের এক গোত্র নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাব্য ও বক্তৃতায় মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ করে বসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তিনি ‘রাসূলের কবি’ খ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রা.) এবং ‘খতীবে রাসূল’ খ্যাত সাম্মাস বিন কায়েস (রা.) কে মোকাবিলার জন্য নির্বাচন করলেন। দু’জনই কবিতা আবৃত্তি ও বাকশৈলীর চিত্তাকর্ষক প্রদর্শনী করলেন। মুসলমান কবি ও বক্তার শ্রেষ্ঠত্ব সবাই স্বীকার করে নিল।
উমরাতুল কাযার সময় যখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের হালতে তাঁর প্রতি প্রাণ উৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করছিলেন তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সামনে চলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বীরত্বের সঙ্গে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। ওই পংক্তিগুলোতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদব ও সম্মানের প্রসঙ্গ যেমন ছিল তেমনি কাফেরদের প্রতি ধমকিও ছিল। ওমর (রা.) তাঁকে বারণ করার চেষ্টা করলেন। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে ওমর! তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করতে দাও। এটা ওই লোকদের ওপর তীর ছুঁড়ে মারার চেয়েও বেশি কার্যকরী।’
দুশমনের নাকের ডগায় পৌঁছে তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলার এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি আর কী হতে পারে! কেননা হুদাইবিয়ার চুক্তিপত্রে ‘অস্ত্র প্রদর্শনীর’ ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু ‘কবিতা আবৃত্তির’ ওপর কোনো বাধা ছিল না।
প্রচারণার প্রচলিত ও সহজলভ্য পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইহুদী প্রচার-মাধ্যম’ এর প্রতিরোধের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। কাব ইবনে আশরাফ ইহূদী প্রোপাগান্ডার এক শক্তিশালী ভিত ছিল। তার যেমন অঢেল সম্পদ ছিল তেমনি সে ছিল একজন কবি। নারীদের অবাধ ও স্বেচ্ছাচারী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে গণ্য করা যায়। কবিতায় মুসলিম নারীদের নাম ধরে ধরে কুৎসা রটাত। রিসালাতের প্রতি কটূক্তিকারীদের আশ্রয়স্থল ও সাহায্যকারীও ছিল সে। বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দান এবং মক্কার কাফেরদেরকে সংঘবদ্ধ করার জন্য মক্কা মুকাররমা চষে বেড়াত। কাফেরদের সমাবেশে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি কটূক্তি করে কবিতা পাঠ করে শোনাত। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ ইবনে সালামা (রা.) ওই অভিশপ্তকে খতম করেন এবং চিরদিনের জন্য তার মুখ বন্ধ করে দেন।
ইহূদী আবু রাফে ‘কুফুরী সাংবাদিকতার’ (এটাকে যদি সাংবাদিকতা বলা হয়) সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তাকারী ছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে পানির মতো পয়সা ব্যয় করতো। অসৎ ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কবিদের সেবায় দিরহাম-দিনারের থলি পৌঁছে দিত। সে কবিরা যেন জীবন-জীবিকার দিক থেকে সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়াযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে এর সব ব্যবস্তা সে করে দিত। দ্বীনী জযবায় উজ্জীবিত কয়েকজন নও মুসলিম তাকেও তার চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ সংবাদ পেলেন অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করলেন এবং ওই ভয়াবহ শত্রুকে যারা জাহান্নামে পাঠিয়েছেন তাদের কামিয়াবীর জন্য দুআ করেছেন।
শেষোক্ত দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডা ছাড়াও ছিল ইসলামবিরোধী অব্যাহত ষড়যন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চুক্তি ভঙ্গের মতো অমার্জনীয় কিছু উপাদান ও উপলক্ষ্য। তাছাড়াও এসব ঘটনার কারণ ও হেকমত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে একথা বলতে পারি, ওই যুগে প্রচলিত মিডিয়াকে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের উপকার ও ফায়দার জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহার করেছেন। মিডিয়া আগ্রাসন ও ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডার বিষয়টিকে তিনি সামান্যও এড়িয়ে যাননি বা উপেক্ষা করেননি। আধুনিক প্রযুক্তি যখন থেকে প্রচার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন করে এবং বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকা যুক্ত হয় তখন থেকে মিডিয়ায় এক বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যায়। ঘরের কোণে কোণে পর্যন্ত দুশমনদের অনুপ্রবেশ ঘটে। এতে মহিলা ও শিশুদের মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। মিডিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়। বর্তমানে প্রায় পুরো মিডিয়া জগৎটা পশ্চিমা পদলেহী এবং ইহূদী-খৃষ্টানদের এজেন্টে ছেয়ে গেছে। নগ্নতা ও অশ্লীলতাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের ধারণাটাই তারা পাল্টে দিয়েছে। মিথ্যাকে সত্য এবং বাতিলকে হক বানিয়ে পেশ করা হচ্ছে।
বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিভিশনগুলো সংবাদের শুরুতে এবং সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় অথবা সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় কুরআনের কোনো আয়াত অথবা হাদীসে নববীর তরজমা প্রচার বা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের মনে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, পুরো সংবাদ অথবা পুরো প্রোগ্রামে ইসলামের স্পিরিট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামের লেভেল লাগিয়ে দেওয়ার পর উগ্র বিনোদনের পৃষ্ঠাসহ অনেক কিছুই ইসলামের খাতায় সংযুক্ত হয়ে যায়। মিডিয়ায় ইসলাম ও মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ চলছে। সাংস্কৃতিক দুর্বৃত্তরা ভদ্রতা ও মানবিকতার চেহারা ঢেকে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রবাহে ভেসে যাচ্ছে। মানবতাবিধ্বংসী কালচারে আজ ছেয়ে যাচ্ছে চারদিক।
অতএব, হে কলম সৈনিকগণ, দাজ্জালি শক্তিগুলো মিডিয়ার ফুঁৎকারে ইসলামের প্রদীপকে নিভিয়ে দিতে চায়। আর আপনি একদিকে ইসলামের অনুসারী, অপরদিকে একজন মিডিয়াকর্মী। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের আমানতদার। আপনার কলমের উত্তাপ যেন ইসলাম-প্রদীপের আলোকে প্রজ্জলিত রাখে, সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনি বিশ্বাস রাখুন, আপনার রব আপনার জন্য এই জগতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত জগত তৈরি করে রেখেছেন।

দাজ্জালের মোকাবিলায় কৃষক সমাজ

যারা দাজ্জালের প্রভুত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, দাজ্জাল তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাবে। এ যুগে কৃষক সমাজ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করার আগে একটি শব্দের মর্ম বুঝে নিন।
শব্দটি হল ‘পেটেন্ট’, যার অর্থ ‘আবিষ্কৃত দ্রব্য তৈরি বা বিক্রয়ের একক অধিকার’। এটি একটি আইন, যা মালিকের মালিকানা স্বত্বকে প্রমাণিত করে। এটি নতুন এক আন্তর্জাতিক কৃষিনীতি, যাকে কৃষক সমাজের উন্নতি ও স্বচ্ছলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব নাম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই নীতি কৃষকের হাত থেকে উৎপাদিত শস্যের এক একটি দানা কেড়ে নেওয়ার গভীর এক চক্রান্ত।
ইহুদী কোম্পানিগুলো যদি কোন শস্যবীজকে পেটেন্ট করে নেয়, তা হলে তার এই অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে এটির মালিক হয়ে গেছে। যেমন – তারা যদি একটা নাম দিয়ে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন বিশেষ প্রজাতির চালকে পেটেন্ট করে নেয়, তাহলে সেই মুসলিম দেশের প্রতিজন কৃষক সেই বিশেষ প্রজাতির চালের বীজ উক্ত কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় যদি তারা নিজেরা বীজ উৎপাদন করে, তা হলে এই অপরাধের দায়ে তাদেরকে জরিমানা আদায় করতে ও জেলের বাতাস খেতে হবে। যেহেতু এই ধরনের বীজ কৃত্রিম উপায়ে জেনেটিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, তাই এই ধরনের বীজ একবছরই ফসল উৎপন্ন করতে সক্ষম। পরবর্তী বছর যদি পুনরায় এই চালের চাষ করতে হয়, তাহলে নতুন বীজ ক্রয় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগ বালাই দমনে ওই কোম্পানির ওষুধই কাজ করবে।
এই আইনটি দেখতে খুবই সরল মনে হয়। কিন্তু বিষয়টি ‘যার লাঠি তার মহিষ’ ধরনের। এই আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ইহুদী কোম্পানিগুলো বিশ্ব বাজারের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পর এবার পৃথিবীর উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আইন তৈরি করেছে, যাতে কাল যদি কেউ তাদের কথা মান্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে খাদ্যের প্রতিটি কণার জন্য মুখাপেক্ষী বানিয়ে দেওয়া যায়।
পেটেন্ট বিলের মাধ্যমে এভাবে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করে চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা সমগ্র পৃথিবীর শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ‘ফার্মারস কোর্ট’ এ পেটেন্ট নিয়ে কৃষকদের সাথে পেটেন্টকারী কোম্পানির কত কেস চলছে।
খাদ্য উৎপাদনকে নিজের মুঠোয় নেওয়া ছাড়াও ইহুদীদের আরও একটি ধ্বংসাত্মক মিশন হল, তারা জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে যে কোন ফসল ধ্বংস করে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। হয়তো ইতিমধ্যে কিছু জীবাণু অস্ত্র তৈরিও করে ফেলেছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বর্ণনা করেছেন, সে সব অবশ্যই পূর্ণ ও বাস্তবায়িত হবে। বাহ্যিক পরিস্থিতি এখনই তার অনুকুল হোক আর না হোক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিস্থিতি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকুল হতে চলেছে। কাজেই এখনও সে সব ভয়াবহতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে উদাসিন থাকা বিবেক ও দ্বীনদারির পরিচয় নেই।

ইমাম মেহেদী ও ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে যুদ্ধগুলো কি শুধু তরবারি দ্বারাই লড়া হবে?

হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে শামের সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে।” (সুনানে আবি দাউদ-খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম-খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী-খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)
আলগুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। এখানকার মওসুম সাধারণ উষ্ণ থাকে। তাপমাত্রা জুলাইয়ে সর্বনিম্ন ১৬.৫ এবং সর্বোচ্চ ৪০.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে। জানুয়ারীতে থাকে সর্বনিম্ন ৯.৩ ডিগ্রী আর সর্বোচ্চ ১৬.৫ ডিগ্রী।
মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী (আঃ) এর হাতে থাকবে।
যেহেতু এখানে মহাযুদ্ধের বিশদ আলোচনা এই লিখার উদ্দেশ্য নয়, তাই আমরা সরাসরি মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে চলে যাব যেখানে মহাযুদ্ধের ভয়াবহতার কিছুটা দৃশ্যপট বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, “ ‘এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যখন উত্তরাধিকারও বন্টিত হবে না, গনিমতের জন্য আনন্দও করা হবে না।’ এরপর তিনি সিরিয়ায় দিকে আঙ্গুল তুলে এর ব্যাখ্যা প্রদান করলেন। বললেন, ‘সিরিয়ার ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বিরাট এক বাহিনী প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। ইসলামপন্থীরাও তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়ে যাবে।’ ”
বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রোমানদের (খ্রিস্টানদের) কথা বলতে চাচ্ছেন? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, সেই যুদ্ধটি হবে ঘোরতর। মুসলমানরা জীবনের বাজি লাগাবে। তারা প্রত্যয় নিবে, বিজয় অর্জন না করে ফিরব না। উভয়পক্ষ লড়াই করবে। এমনকি যখন রাত উভয়ের মাঝে আড়াল তৈরি করবে, তখন উভয়পক্ষ আপন আপন শিবিরে ফিরে যাবে। কোন পক্ষই জয়ী হবে না। এভাবে একদল আত্মঘাতী জানবাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর আরেকদল মুসলমান মৃত্যুর শপথ নিবে যে, হয় বিজয় অর্জন করব, নয়তো জীবন দিয়ে দিব। উভয়পক্ষ যুদ্ধ করবে। রাত তাদের মাঝে আড়াল তৈরি করলে চূড়ান্ত কোন ফলাফল ছাড়াই উভয়পক্ষ আপন আপন শিবিরে ফিরে যাবে। এভাবে মুজাহিদদের এই জানবাজ দলটিও নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারপর আরেকদল মুসলমান শপথ নিবে। হয় জয় ছিনিয়ে আনব, নতুবা জীবন দিয়ে দিব। তারা যুদ্ধ করবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। রাত নেমে এলে উভয়পক্ষই উভয়পক্ষই জয় না নিয়ে শিবিরে ফিরে যাবে। এই জানবাজ দলটিও নিঃশেষ হয়ে যাবে।
চতুর্থ দিন অবশিষ্ট মুসলমানগণ যুদ্ধের জন্য শত্রুর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে যাবে। এবার আল্লাহ শত্রুপক্ষের জন্য পরাজয় অবধারিত করবেন। মুসলমানরা ঘোরতর যুদ্ধ করবে – এমন যুদ্ধ, যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে যে, মৃতদের পাশ দিয়ে পাখিরা উড়বার চেষ্টা করবে; কিন্তু মরদেহগুলো এত দূর পর্যন্ত  ছড়িয়ে থাকবে কিংবা লাশগুলো এত দুর্গন্ধ হয়ে যাবে যে, পাখিগুলো মরে মরে পড়ে যাবে। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের পরিজন তাদের গণনা করবে। কিন্তু শতকরা একজন ব্যতীত কাউকে জীবিত পাবে না। এমতাবস্থায় গনিমত বণ্টনে কোন আনন্দ থাকবে কি? এমতাবস্থায় উত্তরাধিকার বণ্টনের কোন সার্থকতা থাকবে কি?
পরিস্থিতি যখন এই দাঁড়াবে, ঠিক তখন মানুষ আরও একটি যুদ্ধের সংবাদ শুনতে পাবে, যা হবে এটির চেয়েও ভয়াবহ। কে একজন চিৎকার করে করে সংবাদ ছড়িয়ে দেবে যে, দাজ্জাল এসে পড়েছে এবং তোমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে তোমাদের পরিবার পরিজনকে ফেতনায় নিপাতিত করার চেষ্টা করছে। শুনে মুসলমানরা হাতের জিনিসপত্র সব দিয়ে ছুটে যাবে। দাজ্জাল আগমনের সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তারা আগে দশজন অশ্বারোহী প্রেরণ করবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি এই দশজন ব্যক্তির নাম, তাদের পিতার নাম, তাদের ঘোড়াগুলোর কোনটির কি রং সব জানি। সে যুগে ভূপৃষ্ঠে যত অশ্বারোহী সৈনিক থাকবে, তারা হবে শ্রেষ্ঠ সৈনিক।” (সহিহ মুসলিম- খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২২৩;  মুসতাদরাকে হাকেম-খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫২৩;  মুসনাদে আবী ইয়া’লা-খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৫৯)
এই হাদিসে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুধু দিনে লড়া হবে। রাতে কোন যুদ্ধ হবে না। তার অর্থ কি এই যে, এই সব যুদ্ধ পুরানো রীতিতে শুধু তীর আর তরবারি দ্বারা লড়া হবে? রাতে যুদ্ধ না হওয়ার কারণ এছাড়া আর কি হতে পারে?
মানুষ মনে করে, হযরত মাহদির আমলে আধুনিক প্রযুক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং যুদ্ধ তীর আর তরবারি দ্বারা লড়া হবে। সম্ভবত এই ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, হাদিসে ব্যবহৃত ‘সাইফুন’ শব্দ থেকে। ‘সাইফুন’ শব্দের অর্থ তরবারি। কিন্তু শুধু একে দলিল বানিয়ে নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে, হযরত মাহদির যুগে তরবারি দ্বারা যুদ্ধ হবে। কেননা, ‘সাইফুন’ শব্দটি শুধু ‘অস্ত্র’ অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন, পবিত্র কুরআনে ‘ত্বইরন’ শব্দের অর্থ ‘পাখি’। আবার বর্তমান যুগে আরবিতে ‘ত্বইরন’ শব্দটি ‘উড়োজাহাজ’ এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া সেই যুগে যুদ্ধ তীর তরবারি দ্বারা সংঘটিত না হয়ে আধুনিক মারনাস্ত্র দ্বারা হওয়ার পক্ষে অনেক আভাস-ইঙ্গিতও হাদিসে রয়েছে। যেমন-
১। কয়েকটি হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত মাহদির যুগের যুদ্ধগুলোতে, যেমন ফোরাতের তীরের যুদ্ধের বর্ণনায় এবং উপরের যুদ্ধের বর্ণনায় বলা হয়েছে, প্রানহানির সংখ্যা এমন হবে যে প্রতি ১০০ জনে ৯৯ জন ব্যক্তি মারা যাবে। যা শুধুমাত্র আধুনিক আনবিক অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারেই সম্ভব।
২। যে হাদিসে দাজ্জালের বাহনের কথা বলা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দাজ্জালের গাধা হবে খুব দ্রুতগামী, কান হবে অনেক লম্বা। এই বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, হাদিসে গাধা দ্বারা কোন প্রাণীকে বোঝানো হয়নি; বরং এর দ্বারা বাহনকে বোঝানো হয়েছে, যা তীব্র গতিসম্পন্ন এবং বাহনের দুই পাশে উড়োজাহাজের ডানার ন্যায় লম্বা কিছু হতে পারে। এবং আমরা জানি, বাহনের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়েছে প্রযুক্তির উপর ভর করেই।
৩। হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত হাদিসে আছে, আ’মাক যুদ্ধে আল্লাহ কাফেরদের উপর উপর ফোরাতের কূল থেকে খোরাসানি ধনুকের সাহায্যে তীর  বর্ষণ করবে। অথচ আ’মাক (সিরিয়ায় আলেপ্পোতে তুরস্কের সীমানার কাছাকাছি গ্রাম) থেকে ফোরাতের নিকটতম তীরের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। সাধারণ কোন তীর ধনুকের দ্বারা ৭৫ কিলোমিটার পার হওয়া সম্ভব নয়। এখানে ধনুকের উদ্দেশ্য তোপ বা ইংরেজিতে “ল্যান্ড টু ল্যান্ড মিসাইল” হতে পারে।
৪। আরেক জায়গায় হাদিসে, যুদ্ধকালীন সময়ে জাজিরাতুল আরবের অন্যতম স্থান ইয়েমেনের ধবংসের কারণ বলেছেন, ফড়িং এর আক্রমণ। আমরা জানি ফড়িং অত্যন্ত দ্রুত উড়তে সক্ষম। হয়তো এর দ্বারা তিনি যুদ্ধবিমানকে বোঝাতে চেয়েছেন।
এছাড়াও আরও অনেক ইঙ্গিত রয়েছে, যেগুলো দ্বারা প্রতিয়মান হচ্ছে, অন্তত দাজ্জালের ধ্বংসযজ্ঞ বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা যায় না। বাকি আল্লাহ ভালো জানে।
সার কথা হল, যুদ্ধ তরবারি দ্বারাই হবে এই মর্মে নিজের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থির করা এবং এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করা ঠিক নয়। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তীর তরবারি দ্বারাই যুদ্ধ হতো। এমতাবস্থায় তিনি যদি এমন কোন সরঞ্জামের কথা উল্লেখ করতেন, যা সে সময় বোঝা সম্ভব ছিল না, তাহলে মানুষের মস্তিস্ক প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে সরে যেত এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ সেটি যথাযথভাবে বুঝতে ব্যর্থ হতো।
আবার এমনও হতে পারে, মুজাহিদরা একের পর এক আরবের তেলকুপগুলো ধ্বংস করে প্রযুক্তির ব্যবহারকে কঠিন করে তুলবে। যেখানে উভয়পক্ষ বাহন হিসাবে ঘোড়া ব্যবহারে বাধ্য হবে। বর্তমান পশ্চিমা মিডিয়া ইউটিউবের মাধ্যমে মুজাহিদদের ক্যাম্পের ট্রেনিং এর যে সব ভিডিও প্রকাশ করেছে, অনেক জায়গাতে ঘোড়ায় চড়ার ট্রেনিং দিতে দেখা গেছে।
মূল কথা, নিশ্চিতভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না।

দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত

অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিক...