এটি ইবলিসের পুরনো রীতি যে, সে সত্যকে সংশয়যুক্ত বানানোর লক্ষ্যে নিজের তৈরি এজেন্টদেরকে সত্যের দাবিসহ মাঠে নামিয়ে দেয় এবং সত্যকে মিথ্যা বানানোর চেষ্টা চালায়। ইবলিসের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এই হবে যে, হযরত মাহদির আগমনের পূর্বে সে একাধিক নকল মাহদি দাড় করিয়ে দিবে, যাতে কিছু লোক তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে সত্য থেকে দূরে সরে যায় এবং যখন আসল মাহদির আগমন ঘটবে, তখন মানুষ আপনা থেকেই সংশয়ের শিকার হয়ে পড়বে যে, কে বলবে, ইনি আসল মাহদি, না ভুয়া মাহদি। ‘বিভ্রান্তকারী নেতৃবৃন্দ বিষয়ক’ হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এক্ষেত্রে ইবলিসের প্রচেস্টাসমূহ অনেকটা এরকম হতে পারেঃ
১। মিথ্যা মাহদির দাবিদারদেরকে দাড় করাবে। তাদের মাঝে হযরত মাহদির গুণাবলী আছে বলে প্রচার করে মুসলমানদের ধোঁকা দেওয়া হবে। এই ভুয়া মাহদির দাবিদার একাধিক হবে। আর একথা বলার অবকাশ থাকে না যে, এই মাহদিদেরকে অপার বিদ্যা, সুদর্শন আকার গঠন ও একদল ভক্ত মুরীদসহ জনসন্মুখে উপস্থিত করা হবে এবং বড় বড় জুব্বা বা কাবলি ওয়ালা মানুষ এই মিথ্যা মাহদিদেরকে আসল মাহদি বলে প্রমাণিত করতে সচেষ্ট হবে। ‘কাদিয়ানী’ সম্প্রদায়ের সৃষ্টিকারী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে প্রথম ইমাম মাহদি, পরে মাসিহ এবং সবশেষে নবীই দাবি করে বসে। আর বর্তমানে এই কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রতি পশ্চিমাদের এবং উপমহাদেশে তাদের দালাল মিডিয়ার সমর্থন সম্পর্কে প্রায় সব সচেতন মুসলিমই ওয়াকিবহাল।
যুগে যুগে অসংখ্য ব্যক্তি নিজেকে মাহদী (এবং অনেক সময় একই সাথে নবীও) হিসেবে দাবী করে। এদের মধ্যে অনেকে সাধারন মানুষ, অনেকে প্রভাবশীল নেতা, এমনকি স্কলারও রয়েছে, তবে শিয়াদের মধ্যে নিজেকে মাহদী দাবী করার প্রচুর প্রবণতা দেখা যায়। আমরা অতি সংক্ষেপে ইতিহাস থেকে ঘুরে আসি।
৭৪৪ খ্রিস্টাব্দে খলীফা হিশাম ইবন আবদুল মালিকের সময়কালে সালিহ ইবন তারিফ নিজেকে নবী এবং মাহদী বলে দাবী করে। সে দাবী করে আল্লাহ্ তার কাছে কিতাব নাযিল করেছে যেখানে ৮০ টি সূরা রয়েছে। এই কিতাবকে কুরআন বলা হতো। তার অনুসারীরা (যাদের সালিহ আল মু’মিনিন বা মুমিনদের পুনরুদ্ধারকারী বলে ডাকা হতো) ইবাদতের সময় এসব সূরা পাঠ করত। সে দাবী করেছিলো যে ঈসা (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথী হবে এবং তার পিছে সালাত আলায় করবেন। সে আরও দাবী করেছিলো তার পর আর কোন নবী আসবে না। তার তৈরি করা মতবাদের মধ্যে কয়েকটি মতবাদ হল একজন পুরুষ যত সংখ্যক নারীকে ইচ্ছা বিয়ে করতে পারবে এবং যত ইচ্ছা ডিভোর্স করতে পারবে, রামাদানের পরিবর্তে রজব মাসে সিয়াম পালন, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তের পরিবর্তে দশ ওয়াক্ত সালাত এবং আরও অনেক কিছু। ইবন হাজম, ইবন খালদুনসহ আরও অনেক স্কলার তার নতুন সৃষ্টি করা মতবাদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন। একাদশ শতাব্দীতে তার প্রবর্তিত ধর্ম বিলুপ্ত হয়।
ইবন তুমার্ট (১০৮০-১১৩০) ছিল দক্ষিন মরক্কের একজন আলেম ও রাজনৈতিক নেতা। সে ১১২১ সালে রমাদানের শেষে এক খুৎবা শেষে নিজেকে মাহদি বলে ঘোষণা দেয়। এরপর সে ১১২৫ সালে আল মোহাদ আন্দোলনের সূচনা করে।
সায়্যিদ মুহাম্মাদ জৌনপুরী ছিল সায়্যিদ বংশের অর্থাৎ হুসাইন বিন আলী (রা.) এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশের। সে মাত্র ৭ বছর বয়সে কুরআন হিফয করে, ১৪ বছর বয়সে ‘আসাদুল উলামা’ বা ‘উলামাদের সিংহ’ এবং ২১ বছর বয়সে ‘সায়্যিদুল আউলিয়া’ বা ‘আউলিয়াদের নেতা’ হিসেবে ভূষিত হয়। তিনি তার ধার্মিকতার ব্যাপারে খুব বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু সে ৫৩ বছর বয়সে ১৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে কাবা তাওয়াফ করার পর রুকন ও মাকামের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করে যে সে-ই প্রতিশ্রুত মাহদি এবং যে তাকে মাহদি হিসেবে বিশ্বাস করবে সে-ই একজন মুমিন। মিয়ান শাহ নিজাম আর কাযি আলাউদ্দিন বিদরী নামক দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি ভুয়া মাহদির সমর্থনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলো, “আমরা বিশ্বাস করলাম এবং একে সত্য হিসেবে গ্রহণ করলাম।” জৌনপুরী এক্ষেত্রে যে নীতি অবলম্বন করেছিলো তা হল যদি দুইজন আস্থাভাজন ব্যক্তি কোন এক ব্যক্তির দাবীর সপক্ষে সমর্থন দেয় তাহলে সেটা প্রতিষ্ঠিত ও বৈধ হয়ে যায়। খুব সম্ভবত জৌনপুরী তার এই সাক্ষীর নীতি সূরা বাকারার ২৮২ নং আয়াত থেকে নিয়েছিল, এই আয়াতটি কুরআন ও হাদিস সঙ্কলনের ক্ষেত্রে দলীল হিসেবে সাহাবারা ব্যাবহার করেছিলেন। জৌনপুরী নিজেকে মাহদী দাবী করার পর মক্কার ওলামারা সাধারনভাবে তার দাবী প্রত্যাখ্যান করেন। এর প্রায় ৭ অথবা ৯ মাস পর সে ইন্ডিয়ায় গিয়ে দুইবার নিজেকে মাহদী বলে দাবী করে – একবার আহমেদাবাদে এবং এরপর গুজরাটের ভাডলিতে। তবে ভাডলির ঘোষণাতে সে তার চূড়ান্ত দাবী হিসেবে উপস্থাপন করেছিলো। সে লোকজনকে বলেছিল তার জীবনবৃত্তান্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং কুরআন ও সুন্নাহ’র সাথে মিলিয়ে দেখতে (সন্দেহ দূর করার জন্য)। যদি তার এই দাবীর পর তাকে ভুল ও ধর্মত্যাগী বুঝা যায় তাহলে যেন তারা তাকে হত্যা করে এবং বিচার দিবস পর্যন্ত অপেক্ষা করে। আর যদি তারা হত্যা করতে না চায় তাহলে যেন তারা তাকে মেনে নেয় এবং তার অনুসরণ করে।
তার দাবীর পরে অনেক ওলামা তাকে মেনে নেয়, অনে ওলামা এই ব্যাপারে নীরব ভুমিকা পালন করে তবে বিশ্বময় জ্ঞানী ও হকপন্থি ওলামারা তার তীব্র বিরোধীতা করেন।
ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ডক্টর রিয়াজ উল ইসলাম এর বর্ণনা মতে, ইতিহাসে যেসব মানুষ নিজেকে মাহদী বলে দাবী করেছিলো তাদের মধ্যে সায়্যিদ মুহাম্মাদ জৌনপুরী ছিল ব্যতিক্রম। তিনি ছিলেন একজন বড় মাপের আলেম এবং তার জীবনযাত্রার মান ছিল ধার্মিকতায় পরিপূর্ণ। সে কোন রাজনৈতিক সুবিধার জন্য নিজেকে মাহদী বলে দাবী করেনি। যখন তার অনুসারীরা তাদের প্রতিপক্ষের উপর অস্ত্র চালানোর ব্যাপারে অনুমতি চাইলো, তখন তিনি তাদের বললেন, “তোমরা তোমাদের নিজেদের কুপ্রবৃত্তির উপর অস্ত্র চালাও। মাহদীর সাহায্যকারী হল আল্লাহ্ নিজে।”
মোটকথা, তার সামগ্রিক ব্যাপার পর্যবেক্ষণ করেই অনেকে তাকে মাহদী মনে করত। তার অনুসারীদের মাঝে প্রায় সব ধরণের লোকই ছিল। অনেক রাজা, মহান ব্যক্তিত্ব সহ এরকম আরও অনেকে তাদের সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কথিত মাহদীর সাথী হয়েছিলো যার ফলে তার সার্কেলে অন্ধ মানুষ থেকে শুরু করে দক্ষ,মেধাবী,সুশিক্ষিত প্রায় সকল প্রকারের মানুষের সমাগম ঘটে। তার অনুসারীদের ব্যাপারে খায়রুদ্দিন মুহাম্মাদ ইল্লাহবাদি উনার কিতাব জৌনপুরনামাতে (পঞ্চম অধ্যায়) বলেন যে তিনি তার অনুসারীদের আল্লাহর ভয়ে অশ্রুসিক্ত চোখ ও ভগ্ন হৃদয় অবস্থায় দেখেছেন। তারা সবসময় কুরআন এর পিছে অধ্যবসায় করত এবং আমলের দিক থেকে তারা খুব শক্ত ছিল। যদিও তারা ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ করত কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা লক্ষ্য রাখত তারা আবু হানিফাকে অনুসরন করতে গিয়ে সুন্নাহ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে কিনা। তারা অন্ধ অনুসরনে বিশ্বাসী ছিল না।
জৌনপুরির এই অনুসরণকারী দলটি মাহদাওিয়া নামে পরিচিত। তাদের একটি অফিসিয়াল সাইট ছাড়াও বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট আছে।
দক্ষিণ মরক্কের সুফি নেতা আহমাদ ইবন আবি মাহালি (১৫৫৯-১৬১৩), ইন্ডিয়ার ধর্মীয় নেতা মহামতি প্রনথ (১৬১৮-১৬৯৪) এদের নামও উল্লেখযোগ্য।
ইমাম হুসাইনের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর যে বাবিসজম মতবাদের প্রবর্তক (যা পরবর্তীতে বাহাই মতবাদের জন্ম দেয়) আলী মুহাম্মাদ শিরাজি (১৮১৯-১৮৫০) নিজেকে মাহদি ও নবী বলে দাবী করে।
সুদানের সুফি মুহাম্মাদ আহমাদ (১৮৪৪-১৮৮৫) ১৮৮১ সালের জুনের ২৯ তারিখ নিজেকে মাহদি বলে দাবী করে।
ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে আহমাদিয়া মুসলিম জামায়াত বা কাদিয়ানী মতবাদের প্রবর্তক মির্জা গোলাম আহমাদ (১৮৩৫-১৯০৮) নিজেকে মুজাদ্দিদ,মাহদী, ঈসা এমনকি শেষ নবী বলেও দাবী করে। সে ছিল মূলত ব্রিটিশদের এজেন্ট। কাদিয়ানী মতবাদের স্বরূপ উন্মোচন করে অনেক কিতাব এ পর্যন্ত লেখা হয়েছে, বাংলাতেও অনেক কিতাব আপনারা দেখতে পাবেন। বাংলাদেশে এরা সরকারের সাহায্যে সহজেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
১৪০০ হিজরির প্রথম দিনে (১৯৭৯ সালের ২০ই নভেম্বর) নজদের অন্যতম প্রধান গোত্রের সন্তান জুহাইমান আল ওতাইবি তার ব্রাদার-ইন-ল মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ আল কাহতানীকে মাহদী বলে দাবী করে। এই দাবী করার পিছনে তাদের যুক্তি ছিল এই যে, আবদুল্লাহ আল কাহতানির নাম ও তার পিতার নাম রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম ও উনার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিতার নামের মতো একই এবং সে মক্কার উত্তর দিক থেকে এসেছে। এদিন ওতাইবির নেতৃত্বে পবিত্র কাবা দখল করা হয়। ওতাইবির নেতৃত্বে থাকা সুসংগঠিত দলটিতে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মতো বিদ্রোহী ছিল, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। দখলের পরপরই সৌদি মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেরিওরের প্রায় ১০০ জন সিকিউরিটি অফিসার পুনরুদ্ধারে এগিয়ে গেলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পিছু হটে। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে কাবা শরীফকে দখল করে রাখার পর সৌদি স্পেশাল ফোর্স ফ্রান্সের স্পেশাল ফোর্সের সহযোগিতায় দুই সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলা এই যুদ্ধ চালিয়ে কাবা শরীফকে বিদ্রোহীদের হাত থেকে মুক্ত করে। এই যুদ্ধে প্রায় ২৫৫ জন মানুষ (আটকে পরা মুসলিম,সেনা ও বিদ্রোহী) নিহত হয় এবং প্রায় ৫৬০ জন আহত হয় (এটা অফিসিয়ালি হিসেব, সংখ্যায় এর পার্থক্যও দেখা যায়)। পরে সৌদি সরকার জুহাইমান আর তার ৬৭ অনুসারীর শিরচ্ছেদ করে।
রিয়াজ আহমেদ গোহার শাহী (জন্ম : ১৯৪১) নিজেকে মাহদী, মাসিয়াহ ও কাল্কি অবতার হিসেবে দাবী করেছিলো। সে Messiah Foundation International এর প্রতিষ্ঠাতা।
ইরাকের দিয়া আবদুল যাহরা কাদিম (১৯৭০-২০০৭) ছিল একটি সশস্ত্র শিয়া গ্রুপ “জুন্দ আল শামা” এর নেতা। সে নিজেকে শিয়া মতবাদের বারতম ইমাম ও মাহদী বলে দাবী করে।
শিয়াদের মধ্যে নিজেকে মাহদি (তাদের আকিদামতে বারোতম ইমাম হল মাহদি যে লুকিয়ে আছে ) দাবী করার প্রচুর প্রবণতা দেখা যায়। শিয়া প্রধান দেশ ইরানে সেমিনারি এক্সপার্ট মেহদী গাফারি’র বক্তব্য অনুযায়ী এমন ৩০০০ ব্যাক্তি জেলে আছে যারা নিজেদের মাহদি বলে দাবী করেছিলো এবং প্রতি মাসেই কেউ না কেউ নিজেকে মাহদি বলে দাবী করে। উল্লেখ্য, ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ তার প্রশাসনকে “The government of the hidden imam” হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং ইরানি নতুন দূতাবাসগুলোকে “মাহদীর দূত” হিসেবে বিবেচনা করে।
শিয়াদের মধ্যে নিজেকে মাহদী দাবী করেছে এমন ব্যাক্তি অসংখ্য হওয়াতে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তির নাম উল্লেখ করা হচ্ছে :
আলী (রা.)’র ভাই জাফর ইবন আবি তালিবের নাতনীর ছেলে আবদুল্লাহ ইবন মুওাওিয়া (সে কুফা ও পারস্যে উমাইয়্যাদ খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলো), মুহাম্মাদ ইবন হাসান আল মাহদী, আবদুল্লাহ আল মাহদী বিল্লাহ প্রমুখ। এছাড়াও আরও অনেক ব্যাক্তি আছে যাদেরকে তাদের অনুসারীরা মাহদী হিসেবে দাবী করে।
হেযবুত তাওহীদ এর প্রতিষ্ঠাতা বায়েজিদ খান পন্নী ওরফে এমামুয্যামান টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান। সে নিজেকে ইমাম মাহদী বলে দাবী করেছিলো। তারা এদেশে তাদের ভ্রান্ত ধারণা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা দুটি নিউজ সাইট (দেশেরপত্র, দৈনিক নিউজ) পরিচালনা করছে যেখানে বিভিন্ন নিউজের পাশাপাশি তারা তাদের মতাদর্শ প্রচার করছে। সংগঠনের নামে একটি ফেসবুক পেজ আছে। এসো আল্লার পথে নামের একটি ফেসবুক পেজের একটি পোস্ট দেখে মনে হয় সেটা হেযবুত তাওহিদের প্রচারনার জন্য।
নিজেকে ইমাম মাহদি বলে দাবী করা লুতফুর রহমানকে ঢাকার গোপীবাগে খুন করা হয়।
২। ইবলিসি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হতে পারে যে, তারা আসল মাহদির অপেক্ষায় থাকবে এবং তার এজেন্ট ও প্রপোগান্ডার মাধ্যমে তাকে মিথ্যা প্রমাণিত করার চেষ্টা করবে। এর জন্য তারা প্রতিটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের সেবা গ্রহণের চেষ্টা চালাবে, যেমনটি এযুগেও আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিষয়টি সহজে বুঝবার জন্য একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।
যে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কিছু সমর্থক সহযোগী থাকে, আবার কিছু বিরুদ্ধবাদীও থাকে। আপনি যে কোন মতাদর্শের নেতাকে দেখুন, দেখবেন, কিছু লোক তার জন্য নিবেদিত প্রাণ আবার কিছু মানুষ তার ঘোর সমালোচক। এমনকি তাদের কাফেরদের এজেন্ট আখ্যায়িত করার লোকেরও অভাব হবে না। প্রত্যেক মতাদর্শের লোকেরা আপন আপন নেতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে থাকে। কেউ যদি তার নেতাকে জিজ্ঞেস করে, অমুক ব্যক্তির আজকাল খুব নামডাক শোনা যাচ্ছে। শুনেছি, তিনি অনেক বড় একজন আল্লাহর ওলী। অনেক ত্যাগী আলেম। তো হযরত তার ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তার ব্যাপারে এই হযরত যে অভিমত ব্যক্ত করবেন, তার পুরো অঙ্গনে সেই অভিমতই অনুসৃত হবে। হযরত যদি বলে দেন, সরকারের লোক; তার থেকে দূরে থাকো, তাহলে দেখবেন, লোকটি যুগের আবদালই হোক না কেন, ফেরেশতারা তার চলার পথে পালক বিছিয়ে দিক না কেন, হজরতের ফতোয়ার পর তার গোটা ভক্তমহল তাকে “সরকারের দালাল” বলে আখ্যায়িত করবে।
এটি এমন এক ব্যাধি, যাতে সমাজের সেই শ্রেণীটি বেশি আক্রান্ত, যার প্রতিজনের হাতে সত্যের পতাকা রয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হল, প্রতিজন সদস্যের পতাকা একজনেরটি অপরজনের থেকে ভিন্ন। তাছাড়া একই মতাদর্শের অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও প্রত্যেকের দাবি, আমার পতাকাই সত্যের পতাকা।
আহ, তারা যদি নিজ নিজ আমিত্বের পতাকাগুলোকে অবনমিত করে ফেলত, তা হলে আল্লাহর কসম, সত্যের পতাকা তাদেরই হাতে বিশ্বময় পতপত করে উড়ত। হায়, যদি তারা আপন মন মস্তিস্ক ও চিন্তা চেতনার সীমাবদ্ধ সীমান্তগুলোকে অসীম করে ফেলত, তাহলে আজ জল ও স্থল, মরু ও মহাশূন্য সব তাদের ধ্বনিতে মুখরিত থাকতো। যদি তারা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে দালালির ফতোয়া আরোপের পরিবর্তে ইসলামের শত্রুদের প্রতি মনোনিবেশ করতো, তাহলে শুধু তাদেরই সারি থেকে কেন, সকল ক্ষেত্র থেকে শত্রুর এজেন্টরা নির্মূল হতো। দাজ্জালের এসব ভয়াবহ ধোঁকা ও প্রতারণার কথা ভেবে মুমিন জননী হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর মতো মহান ব্যক্তিগণও কেঁদে উঠতেন। মহানবীর সাহাবাগণও ক্রন্দন করতেন।
এ ছিল তাদের পরকালের ভয়। অন্যথায় তাদের মতো ব্যক্তিত্বদের সমস্যার কিছু ছিল না। যে লোকটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াতপ্রাপ্ত, নূরে এলাহি দ্বারা যাকে পথ দেখানো হয়ে থাকে, তার আবার ভাবনা কিসের। চিন্তা তো থাকা দরকার গুনাহগারদের। কিন্তু আফসোস! আমরা কখনও ভেবে দেখার কষ্টটুকু পর্যন্ত স্বীকার করি না। আর এমনভাবে নিশ্চিন্তমনে জীবন অতিবাহিত করছি, যেন কোন ফিতনাই নাই।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত
অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিক...
-
আর্টিকেল ইনডেক্স – দাজ্জালের আলোচনাঃ উম্মতের জন্য একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি দাজ্জালের ফ...
-
কাফেররা মুসলমানদেরকে যে দৃষ্টিভঙ্গির দিকেই নিতে চায়, সারা বিশ্ব ওদিকেই দৌড়ে যেতে শুরু করে। সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ কোন প্রকার লাভ লোকসান ...
-
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,...
No comments:
Post a Comment