Friday, 19 July 2019

দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত

অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিকের ঘোষণা প্রচার করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক মুসলমানকে একটি বিষয় বুঝে নেওয়া আবশ্যক যে, পরীক্ষার এই হলটি অতিক্রম করা ব্যতীত জান্নাত ও জাহান্নামের ফয়সালা হতে পারে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
“তোমরা কি মনে করছ যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অথচ এখনও আল্লাহ জেনে নেননি যে, তোমাদের কে আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করেছে আর কারা দৃঢ়পদ।” (সূরা আল ইমরান : ১৪২)
এটি আল্লাহ পাকের বিধান। আল্লাহর বিধান কখনও পরিবর্তন হয় না। আপনি হযরত মাহদী ও দাজ্জাল বিষয়ক হাদিসগুলো পড়েছেন। সবগুলো হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে, হযরত মাহদী ও ঈসা (আঃ) এর আগমনের উদ্দেশ্য যুদ্ধ। আবির্ভূত হয়েই তারা কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে মুজাহিদদের নেতৃত্ব দিবেন। এ কারণে প্রত্যেক মুসলমানকে আপন আপন ঈমানের ভাবনা ভাবা দরকার। নিজের ঈমানকে রক্ষা করার জন্য অন্তরে যুদ্ধের চেতনা ও শাহাদাতের আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করা দরকার। মুনাফিকদের জন্য একাজটি অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহ পাক বলেনঃ
“তারা (মুনাফিকরা) যদি বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে অবশ্যই তারা এ কাজের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করত।” (সূরা তাওবা : ৪৬)
যেমনটি আগে বলা হয়েছে, মুসলমানদের ধোঁকা দিতে ইবলিসি শক্তিগুলো মিথ্যা মাহাদিকে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে পারে আর সত্যিকার মাহদীকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসাবে আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। কাজেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মাহদীর যেসব আলামত বর্ণনা করেছেন, সেগুলোকে সামনে রেখে ঘটনার বাস্তবতা বুঝবার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, যেগুলো অনুসরণ করে চললে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
১। দাজ্জালের যুগে বাস্তবতা ততটা হবে না, যতটা চলবে গুজব ও অপপ্রচার। এই প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম হবে আধুনিক প্রচার মাধ্যম। যেমন – পত্রিকা, রেডিও, টিভি, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি। কাজেই এই আধুনিক কমিউনিকেশন ও অন্যান্য সুবিধা থেকে নিজেকে যতসম্ভব মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে বরং এখন থেকেই এমন অভ্যাস গড়ে তুলুন যে, কাল যদি আপনি এসব প্রযুক্তি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন, তা হলে এসব পরিত্যাগ করতে যেন আপনাকে কোন সমস্যায় নিপাতিত হতে না হয়। কাজেই এসব আধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীলতা যত কমানো যায়, আপনার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ততই কল্যাণকর প্রমাণিত হবে।
২। দাজ্জালি মিডিয়া যারা পড়ে ও শোনে, তারা সাধারণত নিজের মাথায় চিন্তা করে না। বরং ওসব মিডিয়ার সংবাদ, ছবি ও পর্যালোচনাই তাদের মন-মস্তিস্কের উপর পুরোপুরি ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। তাই ওসব প্রচার মাধ্যম থেকে যথাসম্ভব নিরাপদ থাকার চেষ্টা করতে হবে।
৩। এ যুগে দাজ্জালি শক্তিগুলো ইসলাম ও ইসলামের অনুসারীদের বিরুদ্ধে এত বেশি প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এই অপপ্রচারের জোরে সত্য চাপা পড়ে থাকে। এজন্য পশ্চিমা মিডিয়ার সূত্রে যদি আপনার কানে যদি কোন সংবাদ আসে, তা হলে পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সংবাদটি অন্য কানে দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এই পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে আপনি দাজ্জালি শক্তিগুলোর অপপ্রচারের ক্রিয়া থেকে পুরোপুরি মুক্ত নাও যদি হতে পারেন, অন্তত তার শক্তি তো অবশ্যই দুর্বল করে দিতে সক্ষম হবেন। পবিত্র কুরআন কাফেরদের এই প্রচেষ্টার কথা এভাবে বর্ণনা করেছেঃ
“তোমরা যখন সংবাদটি শুনেছ, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা নিজেদের ব্যাপারে সু ধারনা করল না কেন? আর কেন এ কথা বলল না যে, এটি তো সুস্পষ্ট এক অপবাদ?” (আন নূরঃ ১২)
অপর এক আয়াতে শোনা সংবাদ পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে মুখ থেকে বের করারও নিন্দা করা হয়েছে।
৪। যখন কোন বিষয়কে দাজ্জালি শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে সন্দিগ্ধ বানিয়ে দেওয়া হবে এবং বিষয়টি ঠিক, না ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে, তখন আধুনিক বস্তুগত উপকরণের মাধ্যমে তথ্য জানার পরিবর্তে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করবেন। কেননা, পরিস্থিতিকে যারা দাজ্জালের চোখে দেখে আর যারা আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে, উভয়ে সমান হতে পারে না। যেমন – পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
“আল্লাহ যার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে তার রবের আলোর উপরই প্রতিষ্ঠিত। এই ব্যক্তি অন্যদের মতো হতে পারে না।” (সূরা জুমারঃ ২২)
বর্তমান যুগের একাধিক ঘটনা প্রমাণিত করে দিয়েছে, যাদের তথ্য জানার একমাত্র উপায় প্রচারমাধ্যম, তারা সত্যের সন্ধান পায় না। বরং তারা যে সব সংবাদ বিশ্লেষণ পড়ে ও শোনে, তাই তাদের দৃষ্টিতে সত্যে পরিণত হয়ে যায়। এভাবে তারা আল্লাহর বাহিনীর পরিবর্তে ইবলিসের বাহিনীকে শক্তি যোগাচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষিতজনদের বিশ্লেষণ এমন হয়ে থাকে যে, তাদের বিবেকের জন্য আক্ষেপ করা ব্যতীত কোন উপায় থাকে না।
৫। হৃদয়ের স্ক্রিনটিকে ওয়াশ করে নিন। বিবেকবান মুসলমান ভাই ও বোনেরা যখন পশ্চিমা মিডিয়ার স্বরূপ বুঝে ফেলবে এবং তাদের টিভি ও কম্পিউটারের স্ক্রিনের ঘটনাচিত্র মনে সংশয় তৈরি করতে শুরু করবে, তখন ডানে বাঁয়ে না দেখে নিজের বক্ষে স্থাপিত ক্ষুদ্র স্ক্রিনটিকে ওয়াশ করে নেওয়াটাই অধিকতর উত্তম হবে। তারপর দেখবেন, পরিষ্কার হওয়ার পর এই ক্ষুদ্র স্ক্রিনটি আপনাকে এমন দৃশ্যাবলী দেখাতে শুরু করবে, যা আপনি গোটা জীবন আধুনিক-থেকে-আধুনিকতর প্রযুক্তি ব্যবহার করেও দেখতে পারতেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেনঃ
“ওহে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ‘ফুরকান’ দান করবেন।” (সূরা আনফালঃ ২৯)
এই ‘ফুরকান’ ই সেই স্ক্রিন, যার পর্দায় সাধারণ চোখে দেখা যায় না এমন সব বিষয়ও পরিদৃশ্য হতে শুরু করে। মালায়ে আ’লা তথা খোদায়ী শক্তির সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক জুড়ে যায়, যেখানে জগতের ব্যবস্থাপনামূলক বিষয়াদি চূড়ান্ত হয় এবং আল্লাহর তাজাল্লি নিপাতিত হয়। মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে দূর দৃষ্টি দান করেন। অবশেষে বান্দা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখতে শুরু করে।
৬। দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূরা কাহাফের প্রথম দিককার আয়াতগুলো পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আপনি এই আয়াতগুলো মর্ম বুঝে পাঠ করুন। দেখতে পাবেন, এই আয়াতগুলোতে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।
(ক) আল্লাহর হামদ ও ছানার পর কুরআনুল কারীম সত্য নবীর উপর নাজিল হওয়া।
“সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর, যিনি তার বান্দার উপর কিতাব নাজিল করেছেন…”
(খ) আল্লাহর নাফরমান বান্দাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে সংঘটিতব্য অতিশয় কঠিন ও কষ্টদায়ক শাস্তির ভয় দেখানো।
“যাতে কঠিন শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে দিতে পারে”।
(গ) সকল অবস্থায় আল্লাহর আনুগত্যকারীদেরকে অনন্ত জীবনের সুখ ও শান্তির সুসংবাদ।
“আর তিনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ শোনাবেন, যারা ……”
(ঘ) সেই লোকদেরও লোকদেরও কঠিন পরিণতির ভয় দেখানো, যারা আল্লাহ পুত্রসন্তান গ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস পোষণ করে।
“আর ভয় দেখাবেন তাদেরকে, যারা বলে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।”
(ঙ) দুনিয়ার জাঁকজমককে ভঙ্গুর আখ্যায়িত করে দুনিয়াবিমুখতা ও তাকওয়া অম্বলনের উৎসাহ দান।
“তার উপর যা কিছু আছে, তা অবশ্যই আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করব।”
(চ) আসহাবে কাহাফের ঘটনা বর্ণনা করে তার চেয়েও বড় ঘটনা শোনার জন্য মস্তিস্ক প্রস্তুত করা।
“তুমি কি মনে কর,গুহা ও রাকীমের অধিবাসীরা আমার নির্দেশনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর?”
(ছ) আসহাবে কাহফের দু’আঃ
“হে আমাদের রব,তুমি নিজ থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান কর এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনা কর।”
এই দু’আর মধ্যে সত্য সন্দিহান হয়ে পড়লে তখন আল্লাহর সমীপে দুটি বস্তু প্রার্থনা করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
একঃ হে আমাদের রব,আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে দৃঢ়তা দান করুন।
দুইঃ আমাদের বিষয়-আশয়ে, যেমন – বাতিলের বিরোধিতা ও সত্যের অনুসরণ এসব কাজে আমাদেরকে নির্দেশনা প্রদান করুন।
এই আয়াতগুলো প্রতিদিন তিলওয়াত করে এগুলোর মর্ম উপলব্ধি করে সে মোতাবেক আমল করুন। আয়াতগুলোকে মুখস্ত করে নিলে অনেক সুবিধা হবে।
৭। তাকওয়া অবলম্বন করুন। তাকওয়ার মূল হল হালাল জীবিকা। তাই হারাম পরিহার করে চলুন। এমনকি সংশয়পূর্ণ বস্তু থেকেও দূরে থাকুন। বর্তমান যুগে তাকওয়া অবলম্বন করা খুবই জরুরী। নিজেকে সেইসব আমলের পাবন্দ বানিয়ে রাখুন,যার ফলে আল্লাহর রহমত বান্দাকে সব সময় আচ্ছাদন করে রাখে। যেমন – সব সময় অজু সহকারে থাকা, নামাজ শেষ করার পর কিছু সময় জায়নামাজে বসে থাকা,তাহাজ্জুদ পড়া,বিশেষ করে যেসব লোক দ্বীনি কোন কাজে দায়িত্বরত আছেন,তাদের জন্য তো তাহাজ্জুদ নামাজ খুবই জরুরী আমল।
৮। আল্লাহর সঙ্গে মজবুত সম্পর্ক গড়ার লক্ষ্যে নিয়মিত তরমজা ও তাফসীরের সঙ্গে পবিত্র কুরআন পাঠ করুন আর নিজের অন্তরকে আলোকিত রাখতে ও সত্যের কাফেলায় শামিল থাকতে সত্যাশ্রয়ী আলেমগনের সাহচর্য অবলম্বন করুন এবং সব সময় সত্যপন্থীদের পথ অনুসরণ করুন।
৯। দ্বীনের চর্চায় মসজিদগুলোর ভূমিকা সক্রিয় করুন। বিশ্ব কুফরি প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রচেষ্টায় রত আছে যে, মুসলমানদের জীবন থেকে মসজিদের ভুমিকাকে নিঃশেষ করে দেওয়া হবে। এই লক্ষ্যেই তারা আলেমসমাজ ও ধার্মিক শ্রেণীর লোকদেরকে নানা পন্থায় বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর মোকাবিলায় প্রতিটি মসজিদে কুরআনের দরস চালু করুন।
১০। যেমনটি উপরে বলা হয়েছে যে,হযরত মাহদীর আমলে যা কিছু সংঘটিত হবে,পূর্ব থেকেই সেসবের আগাম প্রস্তুতি ঈমানের চিহ্ন বলে বিবেচিত হবে। যেমন – নিজেকে গরম ও ঠাণ্ডায় অভ্যস্ত বনানো,লাগাতার কয়েকদিন পর্যন্ত ক্ষুধা পিপাসা সহ্য করা,পাহাড়ে চলাচলের সাহস ও অভ্যাস করা,পাহাড়ি জীবনের সাথে নিজের স্বভাব চরিত্রকে খাপ খাইয়ে নেওয়া,ঘোরতর যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া,নিজের মধ্যে ও পরিবার পরিজনকেও আল্লাহর পথে কুরবানি দেওয়ার লক্ষ্যে এখনই প্রস্তুত করতে থাকা ইত্যাদি।
কবির ভাষায়ঃ
“আমি যখন বলি আমি মুসলমান,তখন আমি শিউরে উঠি;
কারণ,আমি জানি,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর দাবী পূরণ করা কত কঠিন।”

Thursday, 18 July 2019

আর্টিকেল ইনডেক্স – দাজ্জালঃ কালো পতাকার চূড়ান্ত শত্রু

আর্টিকেল ইনডেক্স –


দাজ্জালের আলোচনাঃ উম্মতের জন্য একটি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

দাজ্জালঃ ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি


দাজ্জালের ফেতনা হাদিসের আলোকে 

দাজ্জালের গঠন-প্রকৃতি

—–দাজ্জালের উভয় চোখ ত্রুটিপূর্ণ হবে


দাজ্জালের বাহন ও তার গতি

—– দাজ্জালের অর্থনৈতিক প্যাকেজ

—– দাজ্জালের ধোঁকা ও প্রতারণা

—– দাজ্জালের অবস্থানে সময় থেমে যাবে কি?

—– দাজ্জালের ফেতনা অনেক বিস্তৃত হবে

—– দাজ্জালের সামনে সন্তান হল পরীক্ষা

—– দাজ্জালের দুনিয়াতে অবস্থানকাল ও নিজেকে রব প্রমাণে যুবককে হত্যা ও জীবিত করা


দাজ্জাল হিসাবে ইবনে সায়্যাদকে সন্দেহ 


—– ইবনে সায়্যাদ কি দাজ্জাল ছিল?

দাজ্জালের আগে পৃথিবীর অবস্থা   

দাজ্জাল কখন আত্মপ্রকাশ করবে? 

দাজ্জাল কোথা থেকে আত্ম প্রকাশ করবে? 

—– দাজ্জাল বিষয়ে ইরাক সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর বর্ণনা

—– দাজ্জালের সাথে হযরত তামীমদারি (রাঃ) এর সাক্ষাত

দাজ্জাল মক্কা ও মদিনায় প্রবেশ করবে না



দাজ্জালকে জয়ী করার লক্ষ্যে মাহদি বিরোধী সম্ভাব্য ইবলিসি চক্রান্তসমূহ

দাজ্জাল ও মিডিয়াযুদ্ধ

নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার (New World Order) নাকি দাজ্জালের আগমনের পূর্ব প্রস্তুতি

দাজ্জালের জন্য অপেক্ষামান শয়তানপূজারী (Satanist) ও জাদুবিদ্যার রুপকারগণ


বোহেমিয়ান ক্লাবঃ শয়তানের পূজারীদের গোপন সংস্থা


জাদু বিদ্যার বর্তমান স্বরূপ




রায়েলিজম



দাজ্জালি এডভান্স ফোর্সের কার্যক্রম বুঝতে অন্তর চক্ষুর প্রয়োজনীয়তা




‘বিশ্বভ্রাতৃত্ব’, ‘বিশ্বনিরাপত্তা’ ও ‘জাতিগত বন্ধুত্ব’ – শব্দের আড়ালে দাজ্জালি ষড়যন্ত্র

—– স্বাস্থ্যখাত নিয়ে দাজ্জালি চক্রান্ত

—– দাজ্জাল ও খাদ্য উপকরণ

—– বানিজ্যখাত নিয়ে দাজ্জালি চক্রান্ত

—– দাজ্জাল ও সম্পদ কুক্ষিগতকরণ

—– নারী জাতির জন্য দাজ্জালি শক্তির জাল




—– ইমাম মাহদির আগমনের দিনটিকে দাজ্জালি মিডিয়া কেমনভাবে বিশ্বে সংবাদ হিসাবে প্রচার করবে?

দাজ্জালের মহাযুদ্ধ ও তাকে হত্যা

—– দাজ্জাল ও পানি নিয়ে যুদ্ধ

—– ইমাম মেহেদী ও ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে যুদ্ধগুলো কি শুধু তরবারি দ্বারাই লড়া হবে?


দাজ্জালি ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায় মুমিনদের দায়িত্ব

দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত  

দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্ব

হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে,সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ”।
(সু’আবুল ইমান খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মু’জামুল কাবীর খণ্ড ৮,পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৮৭)
অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে,সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহ পাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা,যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই ইসলামী শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
মোটকথা,মুসলমানের জীবন থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন,সেটি হল খেলাফত।
যদি খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের (১৯২৪ সাল) এর পর থেকে এ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতা সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদের ঘরগুলোরই মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘরগুলোই মুসলিম সমাজকে এই পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। বহু মুসলিম ভূখণ্ডে এমনও ঘটেছে যে, এই সর্বশেষ দুর্গটি ছাড়া মুসলমানদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গগুলোতে অবস্থানরত ইসলামী বাহিনীগুলো সাহস হারায়নি এবং নিজ নিজ রণাঙ্গনে দৃঢ়পদে টিকে রয়েছে।
ইসলামের এই দুর্গগুলোতে যে বাহিনী আছে, তারা হল মুসলিম নারীদের বাহিনী, যারা ইসলামের জন্য সেই মহান কীর্তি আঞ্জাম দিয়েছে, যা ইসলামবিরোধীদের হাজার প্রচেষ্টার পর আজও অটুট রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জাতি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ঈমানদার মা ও বোনদেরকে এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতনতা, সাহসিকতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা আপনার মোকাবেলায় একনাগাড়ে ৯০ বছর যাবত পরাজয় বরণ করে আসছে। এসব পরাজয় থেকে তারা এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে যে, মোকাবেলা করে এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না – আমাদেরকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবার তারা যে কৌশলটি অবলম্বন করেছে, তা হল মুসলমানদের ঘরগুলোতে যে ইসলামী বাহিনীটি অবস্থান নিয়ে আছে, তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে দিতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো মনোমুগ্ধকর শ্লোগান নিয়ে দরদী বন্ধুর রূপ ধারণ করে তারা আপনার সামনে এসে হাজির হয়েছে।
কাজেই আমার মা ও বোনেরা! সময়ের নাজুকতা ও শত্রুপক্ষের ধোঁকা-প্রতারনা উপলব্ধি করে আপনাদেরকে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে উদাসীন হবেন না। মুসলমান পুরুষদের বাহিনী, যারা আপন দায়িত্ব থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যারা মানসিকভাবে পরাজয়ের শিকার হয়ে আছে, হতাশার কালো মেঘ যাদের ঘিরে রেখেছে, আপনারা মহিলাদেরকে আল্লাহ এই যোগ্যতা দান করেছেন যে, আপনারা পলায়মান এই বাহিনীটিকে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেন, তাদের অবশ বাহুগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করে দিতে পারেন, ভীত সন্ত্রস্ত পুরুষদের মাঝে আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তাদেরকে কর্তব্য পালনের উপযোগী বানিয়ে তুলতে পারেন।
মহান আল্লাহ আপনাদেরকে সত্তাগতভাবেই একটি সংগঠন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একজন নারী মানেই একটি সংগঠন। এ কারণে দাজ্জালের ফেতনার বিরুদ্ধে আপনারা অনেক বেশি কাজ করতে পারেন।
সন্তানদেরকে খাঁটি মুসলমান বানানো এবং তাদেরকে সর্বাবস্থায় ইসলামী নিতি-আদর্শের প্রহরী হিসাবে গড়ে তোলা মহিলাদেরই দায়িত্ব। সন্তানদের মন মস্তিস্ককে শৈশব থেকেই এ কথাটি বসিয়ে দিতে হবে যে, তার ঈমান জগতের প্রতিটি বস্তুর চেয়ে মূল্যবান। কাজেই ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি সমগ্র দুনিয়াকেও কুরবান দিতে হয়, তাহলে অকুণ্ঠচিত্তে তা করতে হবে। তবুও ঈমানের গাঁয়ে আঁচড়টিও লাগতে দেওয়া যাবে না।
হযরত ইমরান ইবনে সুলাইম কালায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “একজন নারীর নিজ গৃহের মাঝে ছুটে বেড়ানো তার জন্য জুতাজোড়া অপেক্ষা উত্তম। স্থুলাকায়া নারীদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। সুসংবাদ গরীব মহিলাদের জন্য। তোমরা তোমাদের নারীদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করাও আর তাদেরকে তাদের ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করার প্রশিক্ষন দাও। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে তারা এই কাজটি করতে বাধ্য হতে পারে।” (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫১)
এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদেরকে আরাম প্রিয় না হওয়া উচিৎ। বরং তাদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করে নিজ ঘরে হাঁটা চলা করে জীবন অতিবাহিত করায় অভ্যস্ত হতে হবে, যাতে শরীরটা ক্ষীণ থাকে। কারণ, তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আগমন করতে পারে যে, তখন নিজের সম্ভ্রম ও ঈমান বাঁচানোর তাগিদে তাদেরকে পাহাড়-বনে-জঙ্গলে পায়ে হেঁটে সফর করতে হবে। যেমনটি আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়ায় ঘটছে।
তাই কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে আমল করুন এবং গোটা পরিবার ও বংশের লোকদের মাঝে যথারীতি ঈমানের অভিযান পরিচালনা করুন। দাজ্জালের মহা ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজেও সজাগ সচেতন থাকুন, অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলুন।
স্মরণ করুন ইরাকের সেই অসহায় মায়েদের, ফিলিস্তিনের সেই বোনদের, যাদের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই তাদের সোহাগ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে।
স্মরণ করুন, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের সে কন্যাদের, যারা জীবনের প্রতিটি পলক ও প্রতিটি মুহূর্ত বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে থাকে।
স্মরণ করুন, সিরিয়ার সেই নিস্পাপ শিশুদের, যারা খোলা আকাশের নিচে মা! মা! করে চিৎকার করছে, কিন্তু তাদের মায়েদের ইমাম মাহদীর আগমনপূর্ব আলামত বহনকারী নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বনু কাল্ব গোত্রের জালেমরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের মা ও বোনদের ভুলে গেলে চলবে না, যে দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের (ভারতীয় উপমহাদেশের) মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন,আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।” (আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি হাদিস শরীফে বর্ণিত সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”,যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে,আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “সমুদ্রের শহীদান (খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে), আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান (খ্রিস্টানদের সাথে মহাযুদ্ধে) ও দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ।” (আল ফিতান,খণ্ড ২,পৃষ্ঠা ৪৯৩)
এসব যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে এক বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, “উক্ত যুদ্ধে যে এক তৃতীয়াংশ লোক শহীদ হবে, তাদের এক একজন বদরি শহীদদের দশজনের সমান হবে। বদরের শহীদদের একজন সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে। পক্ষান্তরে এই ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর একজন শহীদ সাতশো ব্যক্তির সুপারিশের অধিকার লাভ করবে।” (আল ফিতান,খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪১৯)
তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শানগত মর্যাদা। অন্যথায় মোটের উপর বদরি শহীদদের মর্যাদা ইতিহাসের সকল শহীদের মাঝে সবচেয়ে উঁচু।
আমাদের মা ও বোনদের বুঝার সুবিধার্থে এখানে হাদিস শরীফে বর্ণিত “গাজওয়াতুল হিন্দ” সম্পর্কে আসা ৫ টি হাদিস-ই বর্ণনা করছি।
(১) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর প্রথম হাদিস
আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে হিন্দুস্থানের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। কাজেই আমি যদি সেই যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যাই, তাহলে আমি তাতে আমার জীবন ও সমস্ত সম্পদ ব্যয় করে ফেলব। যদি নিহত হই, তাহলে আমি শ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্তর্ভুক্ত হব। আর যদি ফিরে আসি, তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব।” (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)
(২) হযরত সা্ওবান (রাঃ) এর হাদিস
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আজাদকৃত গোলাম হযরত সা্ওবান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের দুটি দল এমন আছে, আল্লাহ যাদেরকে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ করে দিয়েছেন। একটি হল তারা, যারা হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে, আরেক দল তারা যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের সঙ্গী হবে।” (সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২)
(৩) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর দ্বিতীয় হাদিস
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিন্দুস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,“অবশ্যই আমাদের একটি দল হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে,আল্লাহ্ সেই দলের যোদ্ধাদের সফলতা দান করবেন,আর তারা রাজাদের শিকল/বেড়ি দিয়ে টেনে আনবে এবং আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন (এই বরকতময় যুদ্ধের দরুন) এবং সে মুসলিমেরা ফিরে আসবে তারা ঈসা ইবন-ই-মারিয়াম কে সিরিয়ায় (শাম) পাবে।”
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
“আমি যদি সেই গাযওয়া পেতাম, তাহলে আমার সকল নতুন ও পুরাতন সামগ্রী বিক্রি করে দিতাম এবং এতে অংশগ্রহণ করতাম । যখন আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের সফলতা দান করতেন এবং আমরা ফিরতাম,তখন আমি একজন মুক্ত আবু হুরায়রা হতাম;যে কিনা সিরিয়ায় হযরত ঈসা (আঃ) কে পাবার গর্ব নিয়ে ফিরত। ও মুহাম্মাদ (সাঃ) ! সেটা আমার গভীর ইচ্ছা যে আমি ঈসা (আঃ) এর এত নিকটবর্তী হতে পারতাম,আমি তাকে বলতে পারতাম যে আমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর একজন সাহাবী।”
বর্ণনাকারী বলেন যে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মুচকি হাসলেন এবং বললেনঃ “খুব কঠিন,খুব কঠিন।” (আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯)
(৪) হযরত কা’ব (রাঃ) এর হাদিস
এটা হযরত কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেনঃ “জেরুসালেমের (বাই’ত-উল-মুক্বাদ্দাস) একজন রাজা তার একটি সৈন্যদল হিন্দুস্তানের দিকে পাঠাবেন,যোদ্ধারা হিন্দের ভূমি ধ্বংস করে দিবে,এর অর্থ-ভান্ডার ভোগদখল করবে,তারপর রাজা এসব ধনদৌলত দিয়ে জেরুসালেম সজ্জিত করবে,দলটি হিন্দের রাজাদের জেরুসালেমের রাজার দরবারে উপস্থিত করবে,তার সৈন্যসামন্ত তার নির্দেশে পূর্ব থেকে পাশ্চাত্য পর্যন্ত সকল এলাকা বিজয় করবে,এবং হিন্দুস্তানে ততক্ষণ অবস্থান করবে যতক্ষন না দাজ্জালের ঘটনাটি ঘটে।” (ইমাম বুখারী (রঃ) এর উস্তায নাঈম বিন হাম্মাদ (রঃ) এই হাদিসটি বর্ণনা করেন তার ‘আল ফিতান’ গ্রন্থে । এতে সেই উদ্ধৃতিকারীর নাম উল্লেখ নেই যিনি কা’ব (রাঃ) থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)।
(৫) হযরত সাফওয়ান বিন উমরু (রাঃ)
তিনি বলেন কিছু লোক তাকে বলেছেন যে রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মাহর একদল লোক হিন্দুস্তানের সাথে যুদ্ধ করবে,আল্লাহ্ তাদের সফলতা দান করবেন,এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদেরকে শিকলবদ্ধ অবস্থায় পাবে। আল্লাহ্ সেই যোদ্ধাদের ক্ষমা করে দিবেন। যখন তারা সিরিয়া ফিরে যাবে,তখন তারা ঈসা ইবনে মারিয়ামকে (আঃ) এর সাক্ষাত লাভ করবেন।” (আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১০)
এখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বর্ণিত তৎকালীন হিন্দুস্তানের সীমারেখা বর্তমান ভারত,নেপাল, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে।
বর্তমানে এই উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সমসাময়িক সময়ে যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খেলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।
তাই, দ্বীনের উপর দৃঢ়পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাওয়া দায়িত্ব আমাদের মা বোনদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

সামাজিক ক্ষেত্রে দাজ্জালি ষড়যন্ত্র রুখতে মুসলিম পুরুষদের দায়িত্ব

সাধারণত পুরুষদের মধ্যে দেখা যায় যে, তারা নিজেরা তো ঠিকই নামাজ রোজা ইত্যাদি সঠিকরূপে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং জান্নাত অর্জনের জন্য পুণ্যের কাজে সময় লাগিয়ে থাকে। কিন্তু নিজের সন্তান, বোন এবং মেয়েদের ব্যাপারে এতটুকু চিন্তা করেন না। যার ফলে, তাদের এবং আত্মীয়স্বজনদের ধর্মীয় জীবনযাপনে বিস্তর অমনোযোগী দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে পুরুষগণ এ অলসতায় মনযোগ না দেওয়ার ফলে পরবর্তীতে তা আস্তে আস্তে প্রশস্ত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে এমন এক সময় এসে উপস্থিত হয় যে, সে তার স্ত্রী সন্তানকে একটি হারাম বস্তু থেকে নিষেধ করতে থাকলেও স্ত্রী সন্তান এটাকে যুগের ফ্যাশন বলে কোমর বেধে তা ব্যবহার করতে থাকে।
সুতরাং পুরুষদের উচিত – তাদের নিজেদের আখেরাত নিয়ে ফিকিরের পাশাপাশি পরিবার পরিজনকেও আগত সম্মুখ ঝড় থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থাপনা তৈরি করে। তাদের কাছে সময় দিয়ে তাদের দ্বীনী শিক্ষা দীক্ষায় প্রতিপালন করেন। সামনের ভয়ানক পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন।
এটা ভেবে বসে পড়বেন না যে, আমি তো একা। আমার কথা কে শুনবে আর কে মানবে। এমনটি কখনও ভাববেন না। আপনি যখনই উম্মতের দরদ নিয়ে আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে কোন পদক্ষেপ নিবেন, তখন আল্লাহ পাকও আপনার প্রতিটি পদক্ষেপে আপনাকে সাহায্য করবেন। ফলশ্রুতিতে আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না – যে কাজটি আপনি একা শুরু করেছিলেন, এখন তা লাখো মুসলমানের কন্ঠ এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে রূপান্তরিত হয়েছে। কোন ময়দানে সাহস হারিয়ে ফেলা, নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং মন ভেঙ্গে দেয়া হকের রাস্তায় কখনও বাধা হতে পারে না। এটা তো এমন পথ, যার মধ্যে শুধু অটল থাকাটাই সফলতার লক্ষণ, রাস্তা তো এমনিতেই তৈরি হতে থাকে।

দাজ্জালি শক্তির মিডিয়া যুদ্ধ ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব

যেমনটি বলা হয়েছে, দাজ্জালের ফেতনায় বাস্তবতার চেয়ে মিথ্যা ও প্রতারণা বেশি থাকবে এবং সেই মিথ্যা-প্রতারনাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার উপায় হবে মিডিয়া। তাই যে সব সাংবাদিক নিজেদেরকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত মনে করেন এবং নিজেদেরকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ রাখতে ইচ্ছা করেন, তারা সর্বাবস্থায় দাজ্জালি শক্তিগুলোর মিথ্যা ও প্রতারণার বিরুদ্ধে নিজেদের কলম ও জবানকে ব্যবহার করুন। সারা বিশ্বের কুফরি মিডিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে বিষ উদগীরন করছে এবং নিজেদের ভুল ব্যবস্থাপনাকে শান্তি ও সুবিচারের আয়োজন হিসাবে প্রমাণিত করতে চাচ্ছে। এমতাবস্থায় মুসলমান সাংবাদিক ভাইয়েরা কি শুধু এই অজুহাতে আপন ধর্মের উপহাস-মশকারা সহ্য করে নিতে পারে যে, আমি যদি ইসলামের পক্ষে লিখি, তাহলে আমার চাকরি চলে যাবে? এর অর্থ কি এই নয় যে, দাজ্জাল এসে বলবে, আমার কথা মেনে নাও; আমার কথা মেনে নাও; অন্যথায় তোমার রিজিক কেড়ে নেওয়া হবে?
এটি কোন সংগঠনের যুদ্ধ নয়। না কোন রাষ্ট্রের, না বিশেষ কোন গোষ্ঠীর। বরং এটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত ও ইবলিসের গোলামদের মধ্যকার লড়াই। বিশেষ কোন বিভাগে নয় – এই যুদ্ধ চলছে মানবজীবনের সব কটি অঙ্গনে। তাই ইবলিসের গোলামরা সেই কাজগুলোই করছে, যেগুলো তারা জীবনভর করে আসছে। কিন্তু মানবতার বন্ধু মুহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত কা’ব ইবনে আশরাফের উত্তরসূরিদেরকে আপন নবীর দ্বীন-ধর্ম নিয়ে তামাশা করতে দেখে কিভাবে নীরব থাকবে?
নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচার-মাধ্যমের গুরুত্বকে কখনো অবহেলা করেননি, বরং মিডিয়াযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সে যুগের প্রচলিত প্রচার মাধ্যমকে সময় ও সুযোগ মতো পূর্ণাঙ্গরূপে ইসলামের দুশমনদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। ইসলামপূর্ব যুগে কাবার দেয়ালকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কাফেররা বিভিন্ন কুৎসামূলক কথা রটনা করত। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রাসূলের কবি’ খ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রা.)কে বলতেন, ‘হে হাস্সান! আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে জবাব দাও। আল্লাহ রূহুল কুদস (জিবরাইল) দ্বারা তোমাকে সাহায্য করবেন।’ নির্দেশ পালনার্থে হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রা.) নিজের ইলহামী কাসীদার সাহায্যে কাফের-মুশরিক ও ইসলামের শত্রুদের এমন দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতেন যে, তাদের কয়েক পুরুষ পর্যন্ত তারা একথা ভুলতে পারত না।
এক বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করেছিলেন, যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষ হতে জবাব দিতেন।
একবার আরবের এক গোত্র নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাব্য ও বক্তৃতায় মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ করে বসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তিনি ‘রাসূলের কবি’ খ্যাত হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রা.) এবং ‘খতীবে রাসূল’ খ্যাত সাম্মাস বিন কায়েস (রা.) কে মোকাবিলার জন্য নির্বাচন করলেন। দু’জনই কবিতা আবৃত্তি ও বাকশৈলীর চিত্তাকর্ষক প্রদর্শনী করলেন। মুসলমান কবি ও বক্তার শ্রেষ্ঠত্ব সবাই স্বীকার করে নিল।
উমরাতুল কাযার সময় যখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহরামের হালতে তাঁর প্রতি প্রাণ উৎসর্গকারী সাহাবায়ে কেরামকে সঙ্গে নিয়ে মক্কা মুকাররমায় প্রবেশ করছিলেন তখন রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সামনে চলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা বীরত্বের সঙ্গে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। ওই পংক্তিগুলোতে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদব ও সম্মানের প্রসঙ্গ যেমন ছিল তেমনি কাফেরদের প্রতি ধমকিও ছিল। ওমর (রা.) তাঁকে বারণ করার চেষ্টা করলেন। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে ওমর! তাঁকে কবিতা আবৃত্তি করতে দাও। এটা ওই লোকদের ওপর তীর ছুঁড়ে মারার চেয়েও বেশি কার্যকরী।’
দুশমনের নাকের ডগায় পৌঁছে তাদেরকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলার এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি আর কী হতে পারে! কেননা হুদাইবিয়ার চুক্তিপত্রে ‘অস্ত্র প্রদর্শনীর’ ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, কিন্তু ‘কবিতা আবৃত্তির’ ওপর কোনো বাধা ছিল না।
প্রচারণার প্রচলিত ও সহজলভ্য পদ্ধতি ব্যবহারের পাশাপাশি নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইহুদী প্রচার-মাধ্যম’ এর প্রতিরোধের প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। কাব ইবনে আশরাফ ইহূদী প্রোপাগান্ডার এক শক্তিশালী ভিত ছিল। তার যেমন অঢেল সম্পদ ছিল তেমনি সে ছিল একজন কবি। নারীদের অবাধ ও স্বেচ্ছাচারী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে গণ্য করা যায়। কবিতায় মুসলিম নারীদের নাম ধরে ধরে কুৎসা রটাত। রিসালাতের প্রতি কটূক্তিকারীদের আশ্রয়স্থল ও সাহায্যকারীও ছিল সে। বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দান এবং মক্কার কাফেরদেরকে সংঘবদ্ধ করার জন্য মক্কা মুকাররমা চষে বেড়াত। কাফেরদের সমাবেশে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি কটূক্তি করে কবিতা পাঠ করে শোনাত। নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে হযরত মুহাম্মদ ইবনে সালামা (রা.) ওই অভিশপ্তকে খতম করেন এবং চিরদিনের জন্য তার মুখ বন্ধ করে দেন।
ইহূদী আবু রাফে ‘কুফুরী সাংবাদিকতার’ (এটাকে যদি সাংবাদিকতা বলা হয়) সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তাকারী ছিল। ইসলামের বিরুদ্ধে পানির মতো পয়সা ব্যয় করতো। অসৎ ও উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কবিদের সেবায় দিরহাম-দিনারের থলি পৌঁছে দিত। সে কবিরা যেন জীবন-জীবিকার দিক থেকে সম্পূর্ণ দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিডিয়াযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারে এর সব ব্যবস্তা সে করে দিত। দ্বীনী জযবায় উজ্জীবিত কয়েকজন নও মুসলিম তাকেও তার চিরস্থায়ী ঠিকানা জাহান্নামে পাঠিয়ে দেন। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এ সংবাদ পেলেন অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করলেন এবং ওই ভয়াবহ শত্রুকে যারা জাহান্নামে পাঠিয়েছেন তাদের কামিয়াবীর জন্য দুআ করেছেন।
শেষোক্ত দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রে ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডা ছাড়াও ছিল ইসলামবিরোধী অব্যাহত ষড়যন্ত্র এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চুক্তি ভঙ্গের মতো অমার্জনীয় কিছু উপাদান ও উপলক্ষ্য। তাছাড়াও এসব ঘটনার কারণ ও হেকমত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে একথা বলতে পারি, ওই যুগে প্রচলিত মিডিয়াকে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের উপকার ও ফায়দার জন্য পূর্ণাঙ্গরূপে ব্যবহার করেছেন। মিডিয়া আগ্রাসন ও ইসলামবিরোধী প্রোপাগাণ্ডার বিষয়টিকে তিনি সামান্যও এড়িয়ে যাননি বা উপেক্ষা করেননি। আধুনিক প্রযুক্তি যখন থেকে প্রচার মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন করে এবং বক্তৃতা ও কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের ভূমিকা যুক্ত হয় তখন থেকে মিডিয়ায় এক বিপ্লব সংঘটিত হয়ে যায়। ঘরের কোণে কোণে পর্যন্ত দুশমনদের অনুপ্রবেশ ঘটে। এতে মহিলা ও শিশুদের মানসিকতা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। মিডিয়ায় ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমনদের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হয়। বর্তমানে প্রায় পুরো মিডিয়া জগৎটা পশ্চিমা পদলেহী এবং ইহূদী-খৃষ্টানদের এজেন্টে ছেয়ে গেছে। নগ্নতা ও অশ্লীলতাকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মানবিক মূল্যবোধের ধারণাটাই তারা পাল্টে দিয়েছে। মিথ্যাকে সত্য এবং বাতিলকে হক বানিয়ে পেশ করা হচ্ছে।
বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিভিশনগুলো সংবাদের শুরুতে এবং সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় অথবা সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় কুরআনের কোনো আয়াত অথবা হাদীসে নববীর তরজমা প্রচার বা প্রকাশ করে সাধারণ মানুষের মনে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, পুরো সংবাদ অথবা পুরো প্রোগ্রামে ইসলামের স্পিরিট ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসলামের লেভেল লাগিয়ে দেওয়ার পর উগ্র বিনোদনের পৃষ্ঠাসহ অনেক কিছুই ইসলামের খাতায় সংযুক্ত হয়ে যায়। মিডিয়ায় ইসলাম ও মানবিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে একতরফা যুদ্ধ চলছে। সাংস্কৃতিক দুর্বৃত্তরা ভদ্রতা ও মানবিকতার চেহারা ঢেকে অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রবাহে ভেসে যাচ্ছে। মানবতাবিধ্বংসী কালচারে আজ ছেয়ে যাচ্ছে চারদিক।
অতএব, হে কলম সৈনিকগণ, দাজ্জালি শক্তিগুলো মিডিয়ার ফুঁৎকারে ইসলামের প্রদীপকে নিভিয়ে দিতে চায়। আর আপনি একদিকে ইসলামের অনুসারী, অপরদিকে একজন মিডিয়াকর্মী। এক্ষেত্রে আপনি ইসলামের আমানতদার। আপনার কলমের উত্তাপ যেন ইসলাম-প্রদীপের আলোকে প্রজ্জলিত রাখে, সেক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনি বিশ্বাস রাখুন, আপনার রব আপনার জন্য এই জগতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত জগত তৈরি করে রেখেছেন।

দাজ্জালের মোকাবিলায় কৃষক সমাজ

যারা দাজ্জালের প্রভুত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, দাজ্জাল তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যাবে। এ যুগে কৃষক সমাজ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পারবে। বিষয়টিতে বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করার আগে একটি শব্দের মর্ম বুঝে নিন।
শব্দটি হল ‘পেটেন্ট’, যার অর্থ ‘আবিষ্কৃত দ্রব্য তৈরি বা বিক্রয়ের একক অধিকার’। এটি একটি আইন, যা মালিকের মালিকানা স্বত্বকে প্রমাণিত করে। এটি নতুন এক আন্তর্জাতিক কৃষিনীতি, যাকে কৃষক সমাজের উন্নতি ও স্বচ্ছলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব নাম দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই নীতি কৃষকের হাত থেকে উৎপাদিত শস্যের এক একটি দানা কেড়ে নেওয়ার গভীর এক চক্রান্ত।
ইহুদী কোম্পানিগুলো যদি কোন শস্যবীজকে পেটেন্ট করে নেয়, তা হলে তার এই অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে এটির মালিক হয়ে গেছে। যেমন – তারা যদি একটা নাম দিয়ে কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন বিশেষ প্রজাতির চালকে পেটেন্ট করে নেয়, তাহলে সেই মুসলিম দেশের প্রতিজন কৃষক সেই বিশেষ প্রজাতির চালের বীজ উক্ত কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় যদি তারা নিজেরা বীজ উৎপাদন করে, তা হলে এই অপরাধের দায়ে তাদেরকে জরিমানা আদায় করতে ও জেলের বাতাস খেতে হবে। যেহেতু এই ধরনের বীজ কৃত্রিম উপায়ে জেনেটিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, তাই এই ধরনের বীজ একবছরই ফসল উৎপন্ন করতে সক্ষম। পরবর্তী বছর যদি পুনরায় এই চালের চাষ করতে হয়, তাহলে নতুন বীজ ক্রয় করতে হবে। সেই সঙ্গে ফসলের রোগ বালাই দমনে ওই কোম্পানির ওষুধই কাজ করবে।
এই আইনটি দেখতে খুবই সরল মনে হয়। কিন্তু বিষয়টি ‘যার লাঠি তার মহিষ’ ধরনের। এই আইনের উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ইহুদী কোম্পানিগুলো বিশ্ব বাজারের উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার পর এবার পৃথিবীর উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই আইন তৈরি করেছে, যাতে কাল যদি কেউ তাদের কথা মান্য করতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তাকে খাদ্যের প্রতিটি কণার জন্য মুখাপেক্ষী বানিয়ে দেওয়া যায়।
পেটেন্ট বিলের মাধ্যমে এভাবে তারা ধীরে ধীরে উৎপাদিত শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করে চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই তারা সমগ্র পৃথিবীর শস্যের উপর কব্জা প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। বিষয়টি আরও ভালোভাবে বুঝতে হলে ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই ‘ফার্মারস কোর্ট’ এ পেটেন্ট নিয়ে কৃষকদের সাথে পেটেন্টকারী কোম্পানির কত কেস চলছে।
খাদ্য উৎপাদনকে নিজের মুঠোয় নেওয়া ছাড়াও ইহুদীদের আরও একটি ধ্বংসাত্মক মিশন হল, তারা জীবাণু অস্ত্রের মাধ্যমে যে কোন ফসল ধ্বংস করে দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করছে। হয়তো ইতিমধ্যে কিছু জীবাণু অস্ত্র তৈরিও করে ফেলেছে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা কিছু বর্ণনা করেছেন, সে সব অবশ্যই পূর্ণ ও বাস্তবায়িত হবে। বাহ্যিক পরিস্থিতি এখনই তার অনুকুল হোক আর না হোক। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিস্থিতি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকুল হতে চলেছে। কাজেই এখনও সে সব ভয়াবহতা ও দুর্যোগ সম্পর্কে উদাসিন থাকা বিবেক ও দ্বীনদারির পরিচয় নেই।

ইমাম মেহেদী ও ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে যুদ্ধগুলো কি শুধু তরবারি দ্বারাই লড়া হবে?

হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে শামের সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে।” (সুনানে আবি দাউদ-খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম-খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী-খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৬৯)
আলগুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। এখানকার মওসুম সাধারণ উষ্ণ থাকে। তাপমাত্রা জুলাইয়ে সর্বনিম্ন ১৬.৫ এবং সর্বোচ্চ ৪০.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস থাকে। জানুয়ারীতে থাকে সর্বনিম্ন ৯.৩ ডিগ্রী আর সর্বোচ্চ ১৬.৫ ডিগ্রী।
মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আলগুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী (আঃ) এর হাতে থাকবে।
যেহেতু এখানে মহাযুদ্ধের বিশদ আলোচনা এই লিখার উদ্দেশ্য নয়, তাই আমরা সরাসরি মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে চলে যাব যেখানে মহাযুদ্ধের ভয়াবহতার কিছুটা দৃশ্যপট বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, “ ‘এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব না হওয়া পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যখন উত্তরাধিকারও বন্টিত হবে না, গনিমতের জন্য আনন্দও করা হবে না।’ এরপর তিনি সিরিয়ায় দিকে আঙ্গুল তুলে এর ব্যাখ্যা প্রদান করলেন। বললেন, ‘সিরিয়ার ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বিরাট এক বাহিনী প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। ইসলামপন্থীরাও তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়ে যাবে।’ ”
বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রোমানদের (খ্রিস্টানদের) কথা বলতে চাচ্ছেন? আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বললেন, ‘হ্যাঁ, সেই যুদ্ধটি হবে ঘোরতর। মুসলমানরা জীবনের বাজি লাগাবে। তারা প্রত্যয় নিবে, বিজয় অর্জন না করে ফিরব না। উভয়পক্ষ লড়াই করবে। এমনকি যখন রাত উভয়ের মাঝে আড়াল তৈরি করবে, তখন উভয়পক্ষ আপন আপন শিবিরে ফিরে যাবে। কোন পক্ষই জয়ী হবে না। এভাবে একদল আত্মঘাতী জানবাজ শেষ হয়ে যাবে। তারপর আরেকদল মুসলমান মৃত্যুর শপথ নিবে যে, হয় বিজয় অর্জন করব, নয়তো জীবন দিয়ে দিব। উভয়পক্ষ যুদ্ধ করবে। রাত তাদের মাঝে আড়াল তৈরি করলে চূড়ান্ত কোন ফলাফল ছাড়াই উভয়পক্ষ আপন আপন শিবিরে ফিরে যাবে। এভাবে মুজাহিদদের এই জানবাজ দলটিও নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারপর আরেকদল মুসলমান শপথ নিবে। হয় জয় ছিনিয়ে আনব, নতুবা জীবন দিয়ে দিব। তারা যুদ্ধ করবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। রাত নেমে এলে উভয়পক্ষই উভয়পক্ষই জয় না নিয়ে শিবিরে ফিরে যাবে। এই জানবাজ দলটিও নিঃশেষ হয়ে যাবে।
চতুর্থ দিন অবশিষ্ট মুসলমানগণ যুদ্ধের জন্য শত্রুর মোকাবিলায় দাঁড়িয়ে যাবে। এবার আল্লাহ শত্রুপক্ষের জন্য পরাজয় অবধারিত করবেন। মুসলমানরা ঘোরতর যুদ্ধ করবে – এমন যুদ্ধ, যা অতীতে কখনও দেখা যায়নি। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে যে, মৃতদের পাশ দিয়ে পাখিরা উড়বার চেষ্টা করবে; কিন্তু মরদেহগুলো এত দূর পর্যন্ত  ছড়িয়ে থাকবে কিংবা লাশগুলো এত দুর্গন্ধ হয়ে যাবে যে, পাখিগুলো মরে মরে পড়ে যাবে। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের পরিজন তাদের গণনা করবে। কিন্তু শতকরা একজন ব্যতীত কাউকে জীবিত পাবে না। এমতাবস্থায় গনিমত বণ্টনে কোন আনন্দ থাকবে কি? এমতাবস্থায় উত্তরাধিকার বণ্টনের কোন সার্থকতা থাকবে কি?
পরিস্থিতি যখন এই দাঁড়াবে, ঠিক তখন মানুষ আরও একটি যুদ্ধের সংবাদ শুনতে পাবে, যা হবে এটির চেয়েও ভয়াবহ। কে একজন চিৎকার করে করে সংবাদ ছড়িয়ে দেবে যে, দাজ্জাল এসে পড়েছে এবং তোমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে তোমাদের পরিবার পরিজনকে ফেতনায় নিপাতিত করার চেষ্টা করছে। শুনে মুসলমানরা হাতের জিনিসপত্র সব দিয়ে ছুটে যাবে। দাজ্জাল আগমনের সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তারা আগে দশজন অশ্বারোহী প্রেরণ করবে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি এই দশজন ব্যক্তির নাম, তাদের পিতার নাম, তাদের ঘোড়াগুলোর কোনটির কি রং সব জানি। সে যুগে ভূপৃষ্ঠে যত অশ্বারোহী সৈনিক থাকবে, তারা হবে শ্রেষ্ঠ সৈনিক।” (সহিহ মুসলিম- খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২২৩;  মুসতাদরাকে হাকেম-খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫২৩;  মুসনাদে আবী ইয়া’লা-খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৫৯)
এই হাদিসে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুধু দিনে লড়া হবে। রাতে কোন যুদ্ধ হবে না। তার অর্থ কি এই যে, এই সব যুদ্ধ পুরানো রীতিতে শুধু তীর আর তরবারি দ্বারা লড়া হবে? রাতে যুদ্ধ না হওয়ার কারণ এছাড়া আর কি হতে পারে?
মানুষ মনে করে, হযরত মাহদির আমলে আধুনিক প্রযুক্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং যুদ্ধ তীর আর তরবারি দ্বারা লড়া হবে। সম্ভবত এই ধারণার উদ্ভব ঘটেছে, হাদিসে ব্যবহৃত ‘সাইফুন’ শব্দ থেকে। ‘সাইফুন’ শব্দের অর্থ তরবারি। কিন্তু শুধু একে দলিল বানিয়ে নিশ্চিতভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় না যে, হযরত মাহদির যুগে তরবারি দ্বারা যুদ্ধ হবে। কেননা, ‘সাইফুন’ শব্দটি শুধু ‘অস্ত্র’ অর্থেও ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন, পবিত্র কুরআনে ‘ত্বইরন’ শব্দের অর্থ ‘পাখি’। আবার বর্তমান যুগে আরবিতে ‘ত্বইরন’ শব্দটি ‘উড়োজাহাজ’ এর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া সেই যুগে যুদ্ধ তীর তরবারি দ্বারা সংঘটিত না হয়ে আধুনিক মারনাস্ত্র দ্বারা হওয়ার পক্ষে অনেক আভাস-ইঙ্গিতও হাদিসে রয়েছে। যেমন-
১। কয়েকটি হাদিসে বলা হয়েছে, হযরত মাহদির যুগের যুদ্ধগুলোতে, যেমন ফোরাতের তীরের যুদ্ধের বর্ণনায় এবং উপরের যুদ্ধের বর্ণনায় বলা হয়েছে, প্রানহানির সংখ্যা এমন হবে যে প্রতি ১০০ জনে ৯৯ জন ব্যক্তি মারা যাবে। যা শুধুমাত্র আধুনিক আনবিক অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারেই সম্ভব।
২। যে হাদিসে দাজ্জালের বাহনের কথা বলা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দাজ্জালের গাধা হবে খুব দ্রুতগামী, কান হবে অনেক লম্বা। এই বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায়, হাদিসে গাধা দ্বারা কোন প্রাণীকে বোঝানো হয়নি; বরং এর দ্বারা বাহনকে বোঝানো হয়েছে, যা তীব্র গতিসম্পন্ন এবং বাহনের দুই পাশে উড়োজাহাজের ডানার ন্যায় লম্বা কিছু হতে পারে। এবং আমরা জানি, বাহনের গতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হয়েছে প্রযুক্তির উপর ভর করেই।
৩। হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বর্ণিত বিস্তারিত হাদিসে আছে, আ’মাক যুদ্ধে আল্লাহ কাফেরদের উপর উপর ফোরাতের কূল থেকে খোরাসানি ধনুকের সাহায্যে তীর  বর্ষণ করবে। অথচ আ’মাক (সিরিয়ায় আলেপ্পোতে তুরস্কের সীমানার কাছাকাছি গ্রাম) থেকে ফোরাতের নিকটতম তীরের দূরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। সাধারণ কোন তীর ধনুকের দ্বারা ৭৫ কিলোমিটার পার হওয়া সম্ভব নয়। এখানে ধনুকের উদ্দেশ্য তোপ বা ইংরেজিতে “ল্যান্ড টু ল্যান্ড মিসাইল” হতে পারে।
৪। আরেক জায়গায় হাদিসে, যুদ্ধকালীন সময়ে জাজিরাতুল আরবের অন্যতম স্থান ইয়েমেনের ধবংসের কারণ বলেছেন, ফড়িং এর আক্রমণ। আমরা জানি ফড়িং অত্যন্ত দ্রুত উড়তে সক্ষম। হয়তো এর দ্বারা তিনি যুদ্ধবিমানকে বোঝাতে চেয়েছেন।
এছাড়াও আরও অনেক ইঙ্গিত রয়েছে, যেগুলো দ্বারা প্রতিয়মান হচ্ছে, অন্তত দাজ্জালের ধ্বংসযজ্ঞ বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত আধুনিক যুদ্ধকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করা যায় না। বাকি আল্লাহ ভালো জানে।
সার কথা হল, যুদ্ধ তরবারি দ্বারাই হবে এই মর্মে নিজের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থির করা এবং এই মর্মে হাদিস বর্ণনা করা ঠিক নয়। কারণ, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে তীর তরবারি দ্বারাই যুদ্ধ হতো। এমতাবস্থায় তিনি যদি এমন কোন সরঞ্জামের কথা উল্লেখ করতেন, যা সে সময় বোঝা সম্ভব ছিল না, তাহলে মানুষের মস্তিস্ক প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে সরে যেত এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেটি বোঝাতে চেয়েছেন, মানুষ সেটি যথাযথভাবে বুঝতে ব্যর্থ হতো।
আবার এমনও হতে পারে, মুজাহিদরা একের পর এক আরবের তেলকুপগুলো ধ্বংস করে প্রযুক্তির ব্যবহারকে কঠিন করে তুলবে। যেখানে উভয়পক্ষ বাহন হিসাবে ঘোড়া ব্যবহারে বাধ্য হবে। বর্তমান পশ্চিমা মিডিয়া ইউটিউবের মাধ্যমে মুজাহিদদের ক্যাম্পের ট্রেনিং এর যে সব ভিডিও প্রকাশ করেছে, অনেক জায়গাতে ঘোড়ায় চড়ার ট্রেনিং দিতে দেখা গেছে।
মূল কথা, নিশ্চিতভাবে কিছু বলা ঠিক হবে না।

দাজ্জাল ও পানি নিয়ে যুদ্ধ

সম্ভবত এখনও মানুষ বুঝতে সক্ষম হবে না যে, দাজ্জাল পানি নিয়ে যুদ্ধ করবে কেন। পানি তো সব জায়গায় পাওয়া যায়। বিষয়টি বুঝতে হলে বর্তমান পৃথিবীতে পানির বাস্তবতা বুঝতে হবে। পৃথিবীতে সুপেয় পানির দুটি বড় ভাণ্ডার আছে। একটি হল তুষারময় পর্বত। এই ভাণ্ডারের পানির পরিমাণ ২৮ মিলিয়ন কিউবেক কিলোলিটার। দ্বিতীয়টি পাতাল। এই ভাণ্ডারটির পানির পরিমাণ ৮ মিলিয়ন কিউবেক কিলোলিটার।
এভাবে পৃথিবীতে বিদ্যমান পানযোগ্য পানির বড় পরিমাণটি হল বরফ, যা গলে পৃথিবীর বিভিন্ন নদীর মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে ভূগর্ভস্থ পানি তার তুলনায় কম। বরফের এই মজুদ এন্টার্টিকা ও গ্রিনল্যান্ডে বেশি। আর এই দুই স্থানের উপর কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন অধিকার নেই। বাকি থাকল ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ। এক্ষেত্রেও দুধরনের অঞ্চল থাকে। একটি সমতল অঞ্চল আরেকটি পার্বত্য। সমতল এলাকায় শহরাঞ্চলের পানির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন কিছু নয়। কেননা, শহরাঞ্চলের পানির সমুদয় স্টক কোনো না কোনো জলাধার বা সরকারী পাম্প থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আগত পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। সেজন্য শহুরে মানুষ পানির জন্য পুরোপুরিভাবে সেখানকার প্রশাসনের দায়ভার ও অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল।
দাজ্জালের ফেতনা গ্রামের তুলনায় শহর এলাকায় বেশি কঠোর হবে এবং শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ নাগরিক উক্ত ফেতনার শিকার হয়ে যাবে। তবে পল্লী অঞ্চলের পানির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্যও দাজ্জালি শক্তিগুলো তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
ভবিষ্যতে পৃথিবীতে পানি নিয়ে যুদ্ধ হবে এমন গুজব আপনি শুনে থাকবেন। জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের, ইরাকের সঙ্গে তুরস্কের, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি নিয়ে বিরোধ-বিবাদ জীবন-মৃত্যুর সমান মর্যাদা রাখে।
দাজ্জালি শক্তিগুলো যদি মুসলিম বিশ্বের উপর প্রবাহমান নদী সাগরগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করে এবং সেই ড্যামগুলোর উপর তাদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তা হলে তারা নদীগুলোর প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে এই জগতটিকে মরুভূমিতে পরিণত করে দিতে পারবে। নদী যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ভূগর্ভস্থ পানি অনেক নিচে চলে যাবে। তারপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষের কাছে পানযোগ্য কোন পানি থাকবে না। ফলে মানুষ ফোঁটা ফোঁটা পানির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে। এখন আমরা সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিন এর পানির অবস্থা, ইরাকের, মিসরের এবং  পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পানি নিয়ে আলোচনা করছি।
সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনঃ  তাবরিয়া উপসাগর বর্তমান পূর্ব ইসরাইলে জর্ডান সিমান্তের সন্নিকটে অবস্থিত। এসময়ও তাতে মিষ্টি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে তার দৈর্ঘ্য উত্তর থেকে দক্ষিনে ২৩ কিলোমিটার। দৈর্ঘ্য বেশির ভাগ উত্তর দিকে, যার পরিমাণ ১৩ কিলোমিটার। তার সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫৭ ফুট। মোট ভূখণ্ডের পরিমাণ ১৫৬ কিলোমিটার। বর্তমানে তাতে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
বর্তমানে তাবরিয়া উপসাগর ইসরাইলের মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আর এই সাগরের পানির প্রধান মাধ্যম হল জর্ডান নদী, যেটি গোলান পর্বতমালার ধারা জাবাল আশ শায়খ থেকে এসেছে। ইসরাইল এখন যে কাজটি করেছে, তা হল তারা আগে ভাগেই তাবরিয়া উপসাগরের গতি ঘুরিয়ে ইসরাইলের দিকে নিয়ে গেছে। এর দ্বারা তারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করছে। অবশিষ্ট পানিগুলো তারা মরুভূমিতে নিয়ে ফেলছে, যাতে মুসলমানদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করা যায়। এর ফলে জর্ডানের ভূমি বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে তাবরিয়া উপসাগরও শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল সিরিয়া থেকে গোলানের পর্বতমালাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। জাবাল আশ শায়খ গোলানের পাহাড়ি ধারার সবচেয়ে উঁচু চূড়া, যেখান থেকে একদিকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং অপরদিকে দামেস্ক একেবারে তার নিচে পরিদৃশ্য হয়। তার উচ্চতা ৯২৩২ ফুট। বর্তমানে জাবাল আশ শায়খের উপর লেবানন, সিরিয়া ও ইসরাইলের কব্জা প্রতিষ্ঠিত। কিছু এলাকা জাতিসংঘের অসামরিক অঞ্চল। পানির দিক থেকে জাবাল আশ শায়খ মুক্ত অঞ্চল। এভাবে ভৌগলিক দিক থেকে এবং পানির বিবেচনায়ও এই পাহাড়ি ধারা উক্ত অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া সেই হাদিসগুলোকেও সামনে রাখতে হবে, যেগুলোতে তাবরিয়া উপসাগর, বাইতুল মুকাদ্দাস ও আফীক ঘাঁটির উল্লেখ রয়েছে। সর্বোপরি একথাটিও মনে রাখতে হবে যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যে মহাযুদ্ধের ধারণা লালন করে যে, মহাযুদ্ধ মেগড এর মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, এই মাঠের অবস্থানও তাবরিয়া উপসাগরের কাছাকাছি পশ্চিমে। আফীক এর যে ঘাঁটিতে দাজ্জাল মুসলমানদের যে অবরোধটি করবে, তার অবস্থানও তাবরিয়া উপসাগরের দক্ষিণে।
ইরাকঃ ইরাকে বড় দুটি নদী প্রবাহমান। দজলা ও ফোরাত। উভয়টি এসেছে তুরস্ক থেকে। তুরস্ক ফোরাত নদীর উপর ‘আতাতুর্ক ড্যাম’ তৈরি করেছে, যেটি পৃথিবীর বড় ড্যামগুলোর একটি, যার পানি ধারনের স্থান ৮১৬ বর্গ কিলোমিটার। এই ভাণ্ডারটি ভরতে হলে ফোরাত নদীকে বর্ষা মৌসুমে এক মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে তাতে ঢালতে হবে। তার অর্থ হল, তুরস্ক তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য ফোরাত নদীর পানি এক মাস পর্যন্ত ইরাক যেতে দিবে না। আর ইসলাম প্রশ্নে তুরস্কের আগের সরকারগুলোর অবস্থান সবারই জানা। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম বর্তমান এরগোদান সরকার। আর তাকে সরানোর সব ধরনের চেষ্টা বর্তমানে অব্যাহত।
হযরত আবু জায়িরার এক বর্ণনায় ফোরাত নদীর তীরে দাজ্জালের যুদ্ধের কথা এসেছে। তিনি বলেন,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর নিকট দাজ্জালের আলোচনা উত্থাপিত হলে তিনি বললেন,“তার আবির্ভাবের সময় মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল তার অনুগামী হয়ে যাবে। একদল অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে পরিজনের সাথে ঘরে বসে থাকবে। একদল এই ফোরাতের তীরে এসে শক্তপায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দাজ্জাল তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর তারা দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি তারা শামের (সিরিয়া,জর্ডান,লেবানন,প্যালেস্টাইন ও দখলকৃত প্যালেস্টাইন নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল) পশ্চিমাঞ্চলে লড়াই করবে। তারা একটি সেনা ইউনিট প্রেরণ করবে,যাদের মাঝে চিত্রা বা ডোরা বর্ণের ঘোড়া থাকবে। এরা ওখানে যুদ্ধ করবে। ফল এই দাঁড়াবে যে,এদের একজনও ফিরে আসবে না।” (মুসতাদরাকে হাকেম,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৬৪১)
মিশরঃ মিশরের সবচেয়ে বড় নদীটি হল নীলনদ। কিন্তু এটিরও উৎপত্তি আফ্রিকার উগান্ডা সেন্ট্রালের ভিক্টোরিয়া ঝিল। নীলনদের পানির সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল রুয়ান্ডা নদী। ২০১১ সালে ইথিউপিয়া সরকার ৪.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে “গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেজিস্টেন্স ড্যাম” নামে ইথিওপিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান নীল নদের উপর ড্যাম নির্মাণ শুরু করে, যার নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা ২০১৭ সালে।
শুরু থেকেই মিসরের সরকার অতি নির্ভরশীল নীল নদের উপর এই ড্যাম নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। সর্বশেষ ৩রা জুন ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট মুরসি প্রয়োজনে এই ড্যাম ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধ করার ঘোষণা দেন এবং এর কয়েক সপ্তাহ পরেই ক্ষমতাচ্যুত হন।
এখন আমরা মহাযুদ্ধের পূর্বে ক্ষয়ক্ষতি বা ধ্বংসের ব্যাপারে কিছু হাদিসকে খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করব। শহর-নগরীর ধ্বংস বা ক্ষয়ক্ষতি যে সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে ‘খারাবুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দটি পুরোপুরি হোক বা আংশিক সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা ধবংসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
হযরত মাছজুর ইবনে গায়লান হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, “সবার আগে ধ্বংস হওয়া ভূখণ্ড হল বসরা (বর্তমান ইরাকে) ও মিশর”। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কারণে তাদের ধ্বংস নেমে আসবে; ওখানে তো অনেক বড় সম্মানিত ও বিত্তবান ব্যক্তিরা আছেন?’ উত্তরে আবদুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বললেন, “রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক ক্ষুধা। আর মিসরের সমস্যা হল নীলনদ শুকিয়ে যাবে আর এটিই মিসরের ধবংসের কারণ হবে”। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯০৭)
যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের পর থেকে আজ পর্যন্ত সেখানকার রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক ক্ষুধা সম্পর্কে প্রায় সব চৌকস ঈমানদারগণই ওয়াকিবহাল। আর জুলাই ২০১৩ তে মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পরে মিসরের রক্তপাত ও গণহত্যা সম্পর্কেও প্রায় সব চৌকস ঈমানদারগণই ওয়াকিবহাল। এখন অপেক্ষা নীলনদের করুন দশার।
হযরত ওহব ইবনে মুনব্বিহ সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “মিশর ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন) নিরাপদ থাকবে। কুফা (বর্তমান ইরাকে) ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে না। মহাযুদ্ধ সংগঠিত হয়ে গেলে বনু হাশিমের এক ব্যক্তির হাতে কুস্তুন্তুনিয়া (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয় হবে।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৮৫)
এখানেও মহাযুদ্ধের পূর্বে সর্বপ্রথম মিশর ও ইরাকের ধ্বংস বা ক্ষতির কথা বলা হয়েছে এবং এই ভূখণ্ডগুলোর (ইরাক ও মিশর)  ধ্বংস বা ক্ষতির আগ পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন) এর নিরাপদে থাকার কথা বলা হয়েছে। আর এই জাজিরাতুল আরবেই মুসলিম বিশ্বের দুই প্রাণ প্রিয় নগরী মক্কা ও মদিনা অবস্থিত।
হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বাইতুল মাকদিসের আবাদ হওয়া মদিনার ক্ষতির কারণ হবে। মদিনার ক্ষতি মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে। মহাযুদ্ধ কুস্তুন্তুনিয়ার (ইস্তাম্বুলের) বিজয়ের কারণ হবে। কুস্তুন্তুনিয়ার বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের কারণ হবে।”
বর্ণনাকারী বলেন,তারপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদিসের বর্ণনাকারীর (অর্থাৎ – স্বয়ং তাঁর) উরুতে কিংবা কাঁধের উপর চাপড় মেরে বললেন, “তোমার এই মুহূর্তে এখানে উপবিষ্ট থাকার বিষয়টি যেমন সত্য,আমার এই বিবরণও তেমনই বাস্তব।” (সুনানে আবী দাউদ,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১০; মুসনাদে আহমাদ,খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৪৫;মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা)
‘বাইতুল মুকাদ্দাসের আবাদ হওয়া’ দ্বারা উদ্দেশ্য ওখানে ইহুদীদের শক্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া (ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই ঘটনাটি ঘটে গেছে)। এখন ইহুদীদের নাপাক দৃষ্টি পবিত্র মদিনার উপর নিবদ্ধ। প্রকৃত ঈমানদারগণ ইহুদীদের এই ষড়যন্ত্র বুঝে ফেলেছে। এভাবে তখন থেকে শুরু হওয়া কুফর ও ইসলামের লড়াই এখন দ্রুতগতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তমূলক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বেশির ভাগ নদী এসেছে ভারত থেকে। ভারত সেগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করছে। ভারতে নির্মিত ফারাক্কা ড্যাম এর কারণে বাংলাদেশের উপর প্রভাব সম্পর্কে আর নতুন করে লিখার কিছু নেই। আর  বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে চলমান নাটক সম্পর্কেও সবাই ওয়াকিবহাল।
চন্নাব নদীর উপর বাগলিহার ড্যাম নির্মাণ এবং নিলাম নদীর উপর কাসনগঙ্গা ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের পানির গতিরোধ করে ভূখণ্ডটির পানির উপর নিয়ন্ত্রনের প্রয়াস সম্পন্ন করেছে।
২৯ শে ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ‘আমাদের সময়’ নামে এক দৈনিকে “পানি নিয়ে সংঘাতে জড়াবে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ” নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রতিবেদনটি নিন্মরূপঃ
“সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কিংবা ভিন্ন কোন সমস্যা নয়, পানির সংকটই দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হতে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান প্রায় সমানভাবেই পানির সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে পানির অধিকার থেকে একইভাবে বঞ্চিত করে আসছে ভারত।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী। ২০২৫ সালের মধ্যেই পাকিস্তান পানির সংকটে পড়বে। এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি পানির অভাবগ্রস্থ দেশে পরিণত হবে। একইভাবে, বাংলাদেশেও ভূ-নিম্নস্থ পানির মজুদ কমছে। ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন সুষম না হওয়া, বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক আগেই। ফলে, বাংলাদেশও পানির তীব্র সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পানির সহজলভ্যতা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যাবে। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি অবৈধভাবে দখলে রাখা ভারতেও পানির সংকট সৃষ্টি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে বর্তমান সময়ের তুলনায় পানির সহজলভ্যতা ২৮ ভাগ কমে যাবে। একারণে, পানির অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ও ভারত-পাকিস্তান সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের পানির অধিকার পদদলিত করে ভারত আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণে একাধিপত্য বজায় রাখছে। পাকিস্তানের সাথে অভিন্ন নদীগুলো থেকে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার ছাড়াও পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণেও চালকের ভূমিকা পালন করছে ভারত। একই দৃশ্য বিদ্যমান বাংলাদেশের সাথে ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহের ক্ষেত্রেও। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির মাধ্যমে ভারত বিয়াস, রাভী ও সুলেজ নদীর ওপর কর্তৃত্ব পায়। অপরদিকে পাকিস্তান সিন্ধু, চেনাব ও ঝেলুম নদীর কর্তৃত্ব পায়। কিন্তু সবগুলো নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে হওয়ায় তারা পানি প্রবাহের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রন করে। একারণে, পাকিস্তান সব সময়ই পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাকিস্তান বারবার আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনীতিক সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়েও রয়েছে সমস্যা। পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশের নদীগুলোতেও পানি প্রবাহে ভারতের অবৈধ নিয়ন্ত্রনের কারণে পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকগুলো অভিন্ন নদী মৃত বা অর্ধ মৃত অবস্থায় আছে।
পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উভয় দেশেরই কৃষি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে প্রতি নিয়ত। ফলে, সামাজিক স্থিতিশীলতা চরম হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। একারনেই, আশংকা করা হচ্ছে, পানির সংকট ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক লড়াই ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণে পরিণত হবে।”
আর দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে। ” (আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে,আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন,ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী-খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪২;আল ফিতান-খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)

দাজ্জালের মহাযুদ্ধ ও তাকে হত্যা

যরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের মহাযুদ্ধ পাঁচটি। তার দুটি ইতিপূর্বে এই উম্মতের আগে বিগত হয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি এই উম্মতের মাঝে সংঘটিত হবে। একটি হল তুর্কি মহাযুদ্ধ। একটি রোমানদের (খ্রিস্টিয়ানদের) সঙ্গে মহাযুদ্ধ। আর তৃতীয়টি হল, দাজ্জালের মহাযুদ্ধ। দাজ্জালের পর আর কোন মহাযুদ্ধ হবে না”। (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৫৪৮, আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিল ইসলামী খেলাফতের সর্বশেষ কর্ণধার তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাদের পরাজয়ের পর, ঈমানের দুর্বলতা আর ইহুদী খ্রিষ্টানদের উস্কে দেওয়া আরব জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে ১৯২৪ সালে তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন খেলাফত শাসনের বিলুপ্তির মাধ্যমে মুসলমানদের ইসলামী শাসননীতি খেলাফতের যা অবশিষ্ট ছিল তারও বিলুপ্তি ঘটে। কুস্তুন্তুনিয়া বা ইস্তাম্বুলের ভূমি থেকে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা তথা ইসলামের পরাজয় ঘটে। কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় কট্টর ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ নামক কুফরি মতবাদের জয় হয়, যা এখনও বিদ্যমান।
রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সঙ্গে এই উম্মতের যে মহাযুদ্ধ হবে তার নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী। আর দাজ্জালের সাথে যে মহাযুদ্ধ হবে তার নেতৃত্ব দিবেন ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ)।
যদিও মুসলিম জাতি নিজেদের অলসতা ও অবহেলার কারণে আগত এক অনিবার্য বাস্তবতার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে না, তবে কুফরি শক্তি ঠিকই এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং স্পষ্ট ভাষায় তার ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে।
হযরত আবু জায়িরা বর্ণনায় বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর নিকট দাজ্জালের আলোচনা উত্থাপিত হলে তিনি বললেন, “তার আবির্ভাবের সময় মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল তার অনুগামী হয়ে যাবে। একদল অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে পরিজনের সাথে ঘরে বসে থাকবে। একদল এই ফোরাতের তীরে এসে শক্তপায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দাজ্জাল তাদের সাথে যুদ্ধ করবে আর তারা দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি তারা শামের (সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন, প্যালেস্টাইন ও দখলকৃত প্যালেস্টাইন নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল) পশ্চিমাঞ্চলে লড়াই করবে। তারা একটি সেনা ইউনিট প্রেরণ করবে, যাদের মাঝে চিত্রা বা ডোরা বর্ণের ঘোড়া থাকবে। এরা ওখানে যুদ্ধ করবে। ফল এই দাঁড়াবে যে, এদের একজনও ফিরে আসবে না”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৬৪১)
হযরত নাফে’ ইবনে উকবা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার অবর্তমানে তোমরা তোমরা জাজিরাতুল আরবে যুদ্ধ করবে। ফলে আল্লাহ এই অঞ্চলটিকে বিজিত করবেন। তারপর তোমরা পারস্যে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাকেও বিজিত করবেন। তারপর তোমরা রোমানদের সাথে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাকেও বিজিত করবেন। তারপর তোমরা দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাকেও বিজিত করবেন”। (সহিহ মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২২৫; সহিহ ইবনে হিব্বান, পৃষ্ঠা ৬৬৭২)
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে।” (আল ইসাবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। ( সুনানে নাসায়ী, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “সমুদ্রের শহীদান, আন্তাকিয়ার-আমাকের শহীদান ও দাজ্জালের শহীদান হল মহান আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম শহীদ”। (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৯৩)
এসব যুদ্ধের শহীদদের সম্পর্কে এক বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে, “উক্ত যুদ্ধে যে এক তৃতীয়াংশ লোক শহীদ হবে, তাদের এক একজন বদরি শহীদদের দশজনের সমান হবে। বদরের শহীদদের একজন সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে। পক্ষান্তরে এই ভয়াবহ যুদ্ধগুলোর একজন শহীদ সাতশো ব্যক্তির সুপারিশের অধিকার লাভ করবে।” (আল ফিতান, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৪১৯)
তবে মনে রাখতে হবে, এটি একটি শানগত মর্যাদা। অন্যথায় মোটের উপর বদরি শহীদদের মর্যাদা ইতিহাসের সকল শহীদের মাঝে সবচেয়ে উঁচু।
রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সঙ্গে এই উম্মতের যে মহাযুদ্ধ হবে তার নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মেহেদী। এই মহাযুদ্ধের বিজয়ের পর তিনি আবারও নব্যুওতের আদলে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবেন যার আমিরুল মুমিনিন হবেন তিনি নিজেই। আর এই মহাযুদ্ধের বিজয় কুস্তুন্তুনিয়া (ইস্তাম্বুল) বিজয়ের কারণ হবে। আর কুস্তুন্তুনিয়ার (ইস্তাম্বুলের) বিজয়, দাজ্জালের আবির্ভাবের কারণ হবে।
আর দাজ্জালের সাথে যে মহাযুদ্ধ হবে তার নেতৃত্ব দিবেন ঈসা ইবনে মারিয়ম (আঃ)। দাজ্জাল বিষয়ে হযরত হুজায়ফা (রাঃ) এর বর্ণিত এর সুবিস্তৃত হাদিসে হযরত ঈসা (আঃ) এর আগমনের ঘটনাটি নিম্নরূপ।
আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সত্তর হাজার ইহুদি দাজ্জালের পিছনে থাকবে, যাদের গাঁয়ে তারজানি চাদর জড়ানো থাকবে (তারজানি চাদরও তায়লাসানের মতো সবুজ চাদরকে বলা হয়)। অনন্তর জুমার দিন ফজর নামাজের সময় যখন নামাজের ইকামাত হয়ে যাবে, তখন যেইমাত্র মাহদি মুসল্লিদের পানে তাকাবেন, অমনি তিনি দেখতে পাবেন, ঈসা ইবনে মারিয়ম আকাশ থেকে নেমে এসেছেন। তার পরিধানে দুটি কাপড় থাকবে। মাথার চুলগুলো এমন চমকদার হবে যে, মনে হবে তার মাথা থেকে পানির ফোঁটা ঝরছে।”
একথা শুনে আবু হুরায়রা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি তার কাছে যাই, তা হলে আমি তার সঙ্গে মু’আনাকা করব কি? উত্তরে রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“শোনো আবু হুরায়রা, তার এই আগমন প্রথমবারের মতো হবে না। তার সঙ্গে তুমি এমন প্রভাবদীপ্ত অবস্থায় মিলিত হবে, যেমনটি মৃত্যুর ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত হয়। তিনি মানুষকে জান্নাতের মর্যাদা ও স্তরের সুসংবাদ প্রদান করবেন। এবার আমিরুল মুমিনীন তাকে বলবে, আপনি সামনে এগিয়ে আসুন এবং লোকদেরকে নামাজ পড়ান। উত্তরে ঈসা বলবে, নামাজের ইকামত আপনার জন্য হেয়েছে। কাজেই ইমামতও আপনিই করুন। এভাবে ঈসা ইবনে মারিয়াম তার পেছনে নামাজ আদায় করবে।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ১১১০)
হযরত মুজাম্মা’ ইবনে জারিয়া আনসারি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, “ঈসা ইবনে মারিয়াম দাজ্জালকে ‘লুদ’ এর ফটকে হত্যা করবে।” (মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪২০; সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২২৪৪)
‘লুদ’ বর্তমানে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত। এটি তেলআবিব থেকে দক্ষিন-পূর্বে ১৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত ছোট্ট একটি শহর। ১৯৯৯ সালের জরিপ অনুযায়ী এই শহরের জনসংখ্যা ৬১ হাজার ১ শত। ইসরাইল এই শহরে সর্বাধুনিক নিরাপত্তা সমৃদ্ধ বিমানবন্দর স্থাপন করেছে। হতে পারে, দাজ্জাল এখান থেকে বিমানযোগে পালানোর চেষ্টা করবে এবং এই বিমানবন্দরেই তাকে হত্যা করা হবে। মহান আল্লাহ তার শত্রু ও ইহুদীদের খোদা দাজ্জালকে হযরত ঈসা ইবনে মারিয়াম(আঃ) এর হাতে হত্যা করাবেন, যাতে সমগ্র বিশ্ব বুঝতে পারে যে, মানবতার বিষফোঁড়াগুলোকে নির্মূল করতে হলে সেগুলোকে কেটে দেহ থেকে আলাদা করা জরুরী আর এই কাজটি জিহাদেরই মাধ্যমে হয়ে থাকে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুসলমানরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ না করা পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। মুসলমানরা ইহুদীদের হত্যা করবে। এমনকি ইহুদীরা পাথর ও গাছের আড়ালে লুকাবে। তখন পাথর ও গাছ বলবে, হে আল্লাহর বান্দা, এই যে আমার পেছনে এক ইহুদি লুকিয়ে আছে; তুমি এসে ওকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ বলবে না। কেননা, সেটি ইহুদীদের গাছ।” (সুনানে মুসলিম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২২৩৯)
গারকাদ গাছ
ইহুদীদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ জড় পদার্থগুলোকেও বাকশক্তি দান করবেন। তারাও ইহুদীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। ইসরাইল যখন গোলান পর্বতমালায় দখল প্রতিষ্ঠা করেছে, তখন থেকেই তারা ওখানে ‘গারকাদ’ বৃক্ষ লাগাতে শুরু করেছে। এছাড়াও তারা স্থানে স্থানে এই গাছটি রোপণ করছে। সম্ভবত এই গাছের সঙ্গে তাদের বিশেষ কোন সম্পর্ক আছে।

ইমাম মাহদির আগমনের দিনটিকে দাজ্জালি মিডিয়া কেমনভাবে বিশ্বে সংবাদ হিসাবে প্রচার করবে?

কাফেররা মুসলমানদেরকে যে দৃষ্টিভঙ্গির দিকেই নিতে চায়, সারা বিশ্ব ওদিকেই দৌড়ে যেতে শুরু করে। সমাজের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ কোন প্রকার লাভ লোকসান বিবেচনা ছাড়াই হলিউড-বলিউড নায়িকাদের মায়াবী চুলের বন্ধনে বন্দি হয়ে আছে। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে মানুষের সামনে পেশ করা হচ্ছে। দাজ্জালি শক্তির বিরুদ্ধের যুদ্ধকে একতরফাভাবে “সন্ত্রাসী যুদ্ধ” বলে মানুষের ব্রেইনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দাজ্জালি শক্তির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে অনেক ভূখণ্ডেই আল্লাহর বান্দারা যুদ্ধ জারি রেখেছেন। বীরত্ব, বাহাদুরি, ধৈর্য এবং আত্মোৎসর্গের এমন এমন ইতিহাস রচনা করে যাচ্ছেন যে, উম্মতের জন্য তা গৌরবের বিষয় ছিল। কিন্তু এই মিডিয়া মানুষকে পুরো বিষয়টিকে ‘সন্ত্রাস’ বলে মোহাচ্ছন করে রেখেছে। একমাত্র আল্লাহ যাকে চান, সেই একমাত্র এর থেকে মুক্ত হতে পারছে। কুফর ও ইসলামের মধ্যকার এ যুদ্ধে মানুষেরা ঐ মতামতটিকেই বিশ্বাস করে নিচ্ছে, যা দাজ্জালি শক্তি এবং তার অনুসারীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গও মিডিয়ার এ বিষাক্ত ছোবল থেকে মুক্ত নয়। যেমনটি হযরত হুজায়ফা (রাঃ) বলেন,
“তোমাদের ব্যাপারে আমি সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের ভয় করছি তা হচ্ছে যে, তোমাদের জানা থাকা সত্তেও তোমরা ঐ বস্তুকেই প্রাধান্য দিবে যা তোমরা প্রত্যক্ষ করবে এবং তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এমতাবস্থায় যে তোমরা টেরও পাবে না।” (ইবনে আবী শাইবা, ৭/৫০৩)
বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলোকে মিডিয়া যেভাবে পেশ করছে, তা যদি সামনে রাখা হয় – অতপর ইমাম মাহদি এর আবির্ভাবের সময় যখন উলামায়ে দ্বীন এবং মুজাহিদিন কর্তৃক উনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার পরিস্থিতিকেও সামনে রাখেন, তবে আন্দাজ করা মুশকিল হয় না যে, মিডিয়া ইমাম মাহদিকে মানুষের সামনে কিভাবে পেশ করবে!! পাশাপাশি মিডিয়াভক্ত লোকেরা ঘটনাটিকে কিভাবে গ্রহণ করবে!!
আসুন আগে আমরা ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ, আগমনের দিনের ঘটনা, তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা এবং তাঁর আগমন নিশ্চিত হবার পর তাঁর বিরুদ্ধে বাহিনী প্রেরণের ঘটনা সম্বলিত হাদিসগুলোর দিকে চোখ বুলিয়ে নেই।
ইমাম মাহদি এর আগমনের বছরের লক্ষণ সেই বছরের রমজান মাস থেকেই প্রকাশ পাবে।
ফিরোজ দায়লামি বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন এক রমজানে আওয়াজ আসবে।”
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! রমজানের শুরুতে? নাকি মাঝামাঝি সময়ে? নাকি শেষ দিকে?”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না, বরং রমজানের মাঝামাঝি সময়ে। ঠিক মধ্য রমজানের রাতে। শুক্রবার রাতে আকাশ থেকে একটি শব্দ আসবে। সেই শব্দের প্রচণ্ডতায় সত্তর হাজার মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলবে আর সত্তর হাজার বধির হয়ে যাবে।”
সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উম্মতের কারা সেদিন নিরাপদ থাকবে?”
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা নিজ নিজ ঘরে অবস্থানরত থাকবে, সিজদায় লুটিয়ে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করবে এবং উচ্চ শব্দে আল্লাহু আকবর বলবে। পরে আরও একটি শব্দ আসবে। প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের। ঘটনার পরম্পরা এরূপঃ শব্দ আসবে রমজানে। ঘোরতর যুদ্ধ সংঘটিত হবে শাওয়ালে। আরবের গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে। হাজী লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে জিলজ্জ মাসে। আর মুহাররমের শুরুটা আমার উম্মতের জন্য বিপদ। শেষটা মুক্তি। সেদিন মুসলমান যে বাহনে চড়ে মুক্তি লাভ করবে, সেটি তার কাছে এক লাখ মূল্যের বিনোদন সামগ্রীতে পরিপূর্ণ ঘরের চেয়েও বেশি উত্তম বলে বিবেচিত হবে।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)
অপর এক বর্ণনায় আছে, “… সত্তর হাজার মানুষ ভয়ে পথ হারিয়ে ফেলবে। সত্তর হাজার অন্ধ হয়ে যাবে। সত্তর হাজার বোবা হয়ে যাবে এবং সত্তর হাজার বালিকার যৌনপর্দা ফেটে যাবে।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমজানে আওয়াজ আসবে। জুলকা’দায় গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে আর জিলহজ্জ মাসে হাজীলুণ্ঠনের ঘটনা ঘটবে।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, খণ্ড ৭, পৃষ্ঠা ৩১০)
হযরত আমর ইবনে শু’আইব এর দাদা বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুলকা’দা মাসে বিভিন্ন গোত্রের মাঝে দ্বন্দ ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ঘটনা ঘটবে। ফলে হজ্জ পালনকারীরা লুণ্ঠিত হবে এবং মিনায় যুদ্ধ সংগঠিত হবে। সেখানে ব্যাপক প্রানহানির ঘটনা ঘটবে এবং রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। অবশেষে তাদের নেতা (হযরত মাহদী) পালিয়ে রোকন ও মাকামে ইব্রাহিমের মধ্যখানে চলে আসবে। তাঁর অনীহা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। তাঁকে বলা হবে, আপনি যদি আমাদের থেকে বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা আপনার ঘাড় উড়িয়ে দিব। বদর যুদ্ধের সংখ্যার সমসংখ্যক মানুষ তাঁর হাতে বায়’আত গ্রহণ করবে। সেদিন যারা তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে, আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে”। (মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৪৯)
তাবরানির অপর এক বর্ণনায় আছে, “বাইয়াত গ্রহণকারী মুসলমানের সংখ্যা হবে বদরী মুজাহিদগণের সংখ্যার সমান। অর্থাৎ তিনশ তের জন।” (আল মু’জামুল আসওসাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ১৭৬)
মুসতাদরাকেরই আরেক বর্ণনায় আছে, হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেছেন, “লোকেরা যখন পালিয়ে হযরত মাহদির কাছে আগমন করবে, তখন মাহদি কাবাকে জড়িয়ে ধরে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকবেন। (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) আমি যেন তাঁর অশ্রু দেখতে পাচ্ছি। মানুষ হযরত মাহদিকে বলবে, আসুন, আমরা আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করি। হযরত মাহদি বলবেন, আফসোস! তোমরা কত প্রতিশ্রুতিই না ভঙ্গ করেছ! কত রক্তই না ঝরিয়েছ! অবশেষে অনীহা সত্ত্বেও তিনি লোকদের থেকে বাইয়াত নেবেন। (হযরত আব্দদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন) ওহে মানুষ! তোমরা যখন তাঁকে পাবে, তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে। কারণ, তিনি দুনিয়াতেও ‘মাহদি’, আসমানেও ‘মাহদি’।”
ইমাম যুহরি বলেছেন, হযরত মাহদির আত্মপ্রকাশের বছর দুজন ঘোষক ঘোষণা করবে। একজন আকাশ থেকে, একজন পৃথিবী থেকে। আকাশের ঘোষক ঘোষণা করবে, লোকসকল! তোমাদের নেতা অমুক ব্যক্তি। আর পৃথিবীর ঘোষক ঘোষণা করবে, ওই ঘোষণাকারী মিথ্যা বলেছে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর ঘোষণাকারী যুদ্ধ করবে। এমনকি গাছের ডাল-পাতা রক্তে লাল হয়ে যাবে। সেদিনকার বাহিনীটি সেই বাহিনী, যাকে ‘জাইশুল বারাজি’ তথা ‘জিনওয়ালা বাহিনী’ বলা হয়েছে। সেদিন যারা আকাশের ঘোষণায় সাড়া দিবে, তাদের মধ্য থেকে বদরি মুজাহিদগণের সংখ্যার সমসংখ্যক লোক তথা তিনশো তেরজন মুসলমান প্রানে রক্ষা পাবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, মারাত্মক যুদ্ধ হবে – শেষ পর্যন্ত হকপন্থিদের মধ্যে শুধু বদর যুদ্ধের সেনাসংখ্যা (৩১৩) পরিমাণ লোক অবশিষ্ট থাকবে এবং তারা সেখান থেকে ফিরে এসে ইমাম মাহদির কাছে এসে বাইয়াত হয়ে যাবে।
হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের ধনভাণ্ডারের নিকট তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক থেকে কতগুলো কালো পতাকা আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি।”
বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন, “তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদী।” (সুনানে ইবনে মাজা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭;  মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
এখানে ‘খলীফা সন্তান’ অর্থ সবাই বাদশা বা শাসকের সন্তান হবে। পিতার রাজত্বের দোহাই দিয়ে সবাই ক্ষমতার দাবী করবে। আর ‘ধন ভাণ্ডার’ দ্বারা কাবা ঘরের নিচের প্রোথিত ধন সম্পদ হতে পারে। আবার নিছক রাজত্বও হতে পারে। কারও মতে, ফোরাত নদীর স্বর্ণ পর্বতকে বোঝানো হয়েছে। কিন্তু রাজত্ব হবার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ,
উম্মুল মুমিনিন হযরত উম্মে সালামা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি হবে। তখন মদিনার একজন লোক পালিয়ে মক্কা চলে আসবে (এই আশঙ্কায় যে, পাছে মানুষ আমাকে খলীফার পদে অধিষ্ঠিত করে কিনা)। মক্কার লোকেরা তাঁকে খুঁজে বের করে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রুকুন এবং মাকামে ইব্রাহিমের মাঝামাঝি স্থানে বাইয়াত গ্রহণ করবে। বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে। মক্কা মদিনার মাঝামাঝি বায়দা নামক স্থানে এসে পৌঁছানোর পর এই বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধসিয়ে দেওয়া হবে। বাহিনী ধ্বসের সংবাদ শুনে সিরিয়ার ‘আবদাল’ (শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ) ও ইরাকের ‘আসাইব’ (সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ) মক্কায় এসে তাঁর (ইমাম মাহদীর) নিকট বাইয়াত হবে। অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে। কিন্তু আল্লাহ তাদেরকে পরাস্ত করবেন, যার ফলে তাদের উপর বিপদ নেমে আসবে। এটিই হল ‘কালবের যুদ্ধ’। যে ব্যক্তি কালবের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, সে ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে। তাঁরপর তিনি ধনভাণ্ডার খুলে দেবেন, মাল দৌলত বণ্টন করবেন এবং ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে সুপ্রতিষ্ঠিত করবেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে সাত বছর কিংবা (বলেছেন) নয় বছর।” (আল মু’জামুল আওসাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস ৬৯৪০; ইবনে হিব্বান, হাদিস ৬৭৫৭; আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস ৯৩১)
আবু দাউদের অপর এক বর্ণনায় আরও আছে, “তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং মানুষ তাঁর জানাজা আদায় করবে।”
ইসলামকে বিশ্বময় খেলাফতের আদলে (কালেমার একক পতাকার ছায়াতলে জাতীয়তাবাদহীন একক ভূখণ্ড) সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে তিনি পেছন দিককার শত্রুর সাথে যুদ্ধ, রোমানদের সাথে মহাযুদ্ধ, আন্তাকিয়ার যুদ্ধ, আমকের যুদ্ধ, ফোরাতের তীরে যুদ্ধ, হিন্দুস্তানের (ভারতীয় উপমহাদেশ) যুদ্ধ, কুনুস্তুন্তনিয়া (বর্তমানে তুরস্কের ইস্তাম্বুল) রক্তপাতহীন যুদ্ধসহ অনেক ছোটবড় যুদ্ধ তাঁর খেলাফতকালে অনুষ্ঠিত হবে।
উম্মুল মুমিনিন হাফসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “কাবা ঘরে আশ্রিত ব্যক্তির (ইমাম মাহদী) বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনীর আগমন হবে। বায়দার প্রান্তরে পৌছা মাত্র বাহিনীর মধ্যভাগ ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। সম্মুখভাগ পেছন ভাগের সেনাদেরকে ডাকাডাকি করতে থাকবে। পরক্ষনেই সম্পূর্ণ বাহিনীকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। ফলে সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।”  (মুসলিম শরীফ)
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন যেন করছিলেন। জাগ্রত হওয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম, এমন কেন করছিলেন হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন,
“খুবই আশ্চর্যের বিষয় – আমার উম্মতের কিছু লোক কাবা ঘরে আশ্রিত কুরায়শী ব্যক্তিকে (ইমাম মাহদী) হত্যার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। বায়দা প্রান্তরে পৌঁছা মাত্র সবাইকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে।”
আমরা বললাম, ‘পথে তো অনেক মানুষের সমাগম থাকে!!’
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, দর্শক, অপারগ এবং পথিক সকলকেই একত্রে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে। তবে অন্তর ইচ্ছা অনুযায়ী আল্লাহ পাক তাদের পুনরুত্থান করবেন”। (মুসলিম শরীফ)
উপরের হাদিসগুলো থেকে প্রতিয়মান হয় যে, যে বছর ইমাম মাহদীর আগমন ঘটবে, সে বছরের রমজান থেকেই আলামত প্রকাশ পেতে থাকবে। এবং সেই বছরের মধ্য রমজান হবে শুক্রবার।
২০২৫ সাল পর্যন্ত আগামী বছরগুলোতে মধ্য রমজান শুক্রবার হবার সম্ভাবনা যে সালগুলোতে সেগুলো হল, ২০১৪ সালের ১১ ও ১২ ই জুলাই (১৪৩৫ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০১৫ সালের ২ ও ৩ জুলাই (১৪৩৬ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার), ২০১৭ সালের ৯ ও ১০ ই জুন (১৪৩৮ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২০ সালের ৮ই মে (১৪৪১ হিজরির ১৫ ই রমজান শুক্রবার), ২০২২ সালের ১৫ ও ১৬ ই এপ্রিল (১৪৪৩ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার), ২০২৩ সালের ৬ ও ৭ ই এপ্রিল (১৪৪৪ হিজরির ১৫ ও ১৬ ই রমজান বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) এবং ২০২৫ সালের ১৪ ও ১৫ ই মার্চ (১৪৪৬ হিজরির ১৪ ও ১৫ ই রমজান শুক্রবার ও শনিবার)।
চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এবং ২৯ বা ৩০ দিনে রমজান মাস হবার উপর ভিত্তি করে মধ্য রমজান শুক্রবার হিসাবে সাব্যস্ত হবে।
‘প্রথম শব্দটি হবে জিব্রাইল এর, দ্বিতীয়টি হবে শয়তানের’ দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, প্রথম শব্দটি আকাশ থেকে আসবে আল্লাহর নির্দেশে। কিন্তু যেহেতু এই শব্দের প্রভাব দুনিয়ার সতর্ক মুমিনদের চোখ খুলে দিবে এবং তাই কাফিররা প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় এমন বিকট কোন শব্দ ঘটাবে, যাকে ‘শয়তানের শব্দ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এবং এই শব্দকে একটি প্রযুক্তিগত দুর্ঘটনা বলে দাজ্জালি মিডিয়াতে এমনভাবে রং লাগিয়ে প্রকাশ করা হবে, যাতে দুনিয়ার সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় এবং অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা সহজেই পথ ভ্রষ্ট হয়।
‘জনৈক খলীফার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে করে বিরোধ সৃষ্টি’, ‘তিনজন খলীফা সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে’ এবং এ সময় ইমাম মাহদীর ‘মদিনা থেকে মক্কায় চলে আসা’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয় যে, মৃত্যুবরণকারী খলীফা কোন এক সৌদি শাসক হবেন, যার মৃত্যুর পর তার স্থলাভিসিক্তি নিয়ে মতবিরোধ ঘটবে। বর্তমানে সৌদি রাজ পরিবারের কাছে রাজত্বের পাশাপাশি মক্কা – মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সৌদি বাদশারা তাদের নামের সাথে তাদের মক্কা – মদিনার সংশ্লিষ্টতাও লিখে থাকেন। যেমন বর্তমান বাদশা তাঁর নাম সরকারীভাবে এভাবে লিখেনঃ King Abdullah Bin Abdul Aziz al Saud, Kingdom of Saudi Arabia & custodian of two holy mosques.
বর্তমান বাদশার বয়স ৮৯ বছর। সৌদি রাজ পরিবারের ব্যাপারে সেখানকার সাধারণ জনগণের অসন্তোষ, তাঁর ভবিষ্যৎ মৃত্যু এবং মধ্য প্রাচ্যের বর্তমান অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা ষড়যন্ত্রও পিছিয়ে নাই। গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছাপে যার শিরোনাম ‘How 5 countries in middle east could become 14’। সেখানে তারা বেছে নিয়েছে সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সৌদি আরব। (এর ভিতরে ৩ টি ভূখণ্ডের সংশ্লিষ্টতা আছে ইমাম মাহদীর আগমনের দিন, আমরা হাদিস থেকে জেনেছি, সিরিয়ার ‘আবদাল’ বা শ্রেষ্ঠ  মুসলমানগণ ও ইরাকের ‘আসাইব’ বা সম্মানিত মুসলিম ব্যক্তিবর্গ মক্কায় এসে ইমাম মাহদীর নিকট বাইয়াত হবে)। আর সৌদি আরবকে ভাঙ্গার সম্ভাব্য কারণ দেখিয়েছেঃ
‘Saudi Arabia faces its own (suppressed) internal divisions that could surface as power shifts to the next generation of princes. The kingdom’s unity is further threatened by tribal differences, the Sunni-Shiite divide and economic challenges’.
হাদিসেও এসেছে “গোত্রগুলো বিদ্রোহ করবে জুলকা’দা মাসে”। আর সব মিলিয়ে যদি সত্যিই পশ্চিমারা অদূর ভবিষ্যতে এর সুযোগ নিতে চায়, স্বভাবতই সবচেয়ে বড় যেই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে তা হলঃ “মক্কা – মদিনার দায়িত্বপ্রাপ্তি” বা custodian of two holy mosques.
হাদিসে উল্লেখ আছে, ‘বাইয়াতের খবর শুনে সিরিয়ার দিক থেকে এক বিশাল বাহিনী প্রেরিত হবে’। এর অর্থ হল ইসলামের শত্রুরা হযরত মাহদীর অপেক্ষায় থাকবে এবং গোয়েন্দা মারফত হারাম শরীফের খবর নিতে থাকবে। হারাম শরীফের সিরিয়ার দিক থেকে বর্তমান সিরিয়া ব্যতীত যে ভূখণ্ডটি আছে তা হল জর্ডান (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর সময়ে এটি তৎকালীন শাম অর্থাৎ বৃহত্তর সিরিয়ার অংশ ছিল)। যেহেতু সিরিয়া থেকে বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী দ্বিতীয় বাহিনী প্রেরণ করবে, তাতে আন্দাজ করা যায়, এই বাহিনীটি আসবে জর্ডান থেকে। এবং তা কিভাবে হবে, এটি বুঝতে হলে বর্তমান জর্ডানের সামরিক কার্যকলাপের দিকে নজর দিতে হবে। সিরিয়াতে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতিকে উপলক্ষ্য করে একে আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ দেখিয়ে জর্ডান সরকার ২০১৩ এর প্রথমার্ধে ৯০০ মার্কিন সৈন্যকে থাকার অনুমতি দেয়। এবং মার্কিন সামরিক সচিব টাইমস পত্রিকাকে এপ্রিলে জানায়, এটি যে কোন সময় বাড়িয়ে ২০,০০০ পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই যদি হয়, বর্তমান অবস্থা, তাহলে যখন সৌদি আরবে গোত্রগুলোর বিদ্রোহের কারণে সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তখন এই জর্ডানের সরকারী বাহিনী তাদের মিত্র কাফের বাহিনীকে নিয়ে নিজ গদি ঠেকাতে কি পদক্ষেপ নিতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, পুরো বাহিনীটিকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে এবং  “সংবাদ বাহক একজন ছাড়া আর কেউ নিস্তার পাবে না।” এরূপ এক আজাবের সাক্ষীকে স্বভাবতই গায়েব/হত্যা করা হবে এবং কখনোই তা প্রকাশ করতে দেওয়া হবে না।
হাদিসে আরও উল্লেখ আছে, “অতঃপর সিরিয়ার বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শীর আবির্ভাব হবে। সিরিয়ার দিক থেকে সে বাহিনী প্রেরণ করবে।” এর অর্থ হল, সে সময় বনু কালবও সিরিয়া শাসন করবে ও তারা ইসলামের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকবে।
কোন কোন হাদিসে এই শাসককে ‘সুফিয়ানি’ হিসাবে অবিহিত করা হয়েছে। এর কারণ, হিসাবে হযরত আলী (রাঃ) বলেন, “সুফিয়ানি – যে লোক শেষ যুগে সিরিয়াতে দখল প্রতিষ্ঠা করবে সে বংশগতভাবে খালিদ ইবনে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ানের বংসদ্ভুত হবে। তার সহচরদের মধ্যেও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের লোক বেশি হবে। মানুষের রক্ত ঝরানো তাদের বিশেষ অভ্যাসে পরিণত হবে। যে লোকই বিরোধিতা করবে,তাকেই হত্যা করা হবে। এমনকি গর্ভস্থিত সন্তানদের পর্যন্ত হত্যা করবে। যখন হারাম শরীফে ইমাম মাহদী (আঃ) এর আগমনের খবর প্রকাশ পাবে তখন এই শাসক ইমাম মাহদী (আঃ) এর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করবে।” (মাজাহিরে হক জাদিদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৩)
“শুরুর দিকে তারা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে,পরে যখন শক্তি ও ক্ষমতা পাকাপোক্ত হয়ে যাবে, তারা অত্যাচার-অবিচার ও অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে।” (ফয়জুল কদির, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ১২৮)
অর্থাৎ প্রথমে তাদেরকে মুসলমানদের মাঝে মহান নেতা বা হিরো হিসাবে উপস্থাপন করা হবে, কিন্তু পরে তাদের আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
“প্রথম বাহিনী  বায়দায় ধ্বসে যাওয়ার পর ইমাম মাহদী মুজাহিদদের নিয়ে সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন, সেখানে অন্য এক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করবেন এবং তাদেরকে পরাজিত করবেন। এই যুদ্ধটি “কাল্ব যুদ্ধ” নামে হাদিসে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই বাহিনীর নেতার উপাধি ‘সুফিয়ানি’ (বনু কালব গোত্রের এক কুরায়শী)। হযরত মাহদী (আঃ)  তারবিয়া হ্রদের কাছে এই শাসককে হত্যা করবেন।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
মুসলিম বিশ্বের জন্য উদ্বিগ্নের বিষয় হল, ১৯৬৬ সালে সামরিক ক্যু এর মাধ্যমে সিরিয়ার ক্ষমতা দখলকারী আল আসাদ পরিবারও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। তারা শিয়াদের যে শাখার অনুসারী অর্থাৎ “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি”/ “আলাওয়াতি” রাও “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। এই আসাদদের অনুগত ও অনুসারী প্রশাসনিক ও সামরিক বাহিনীর বেশির ভাগই “নুসাইরিয়া”/ “আলাভি” তথা “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের। ইসরাইল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠের কারণে বেশির ভাগ মুসলিমরা এই পরিবারকে হিরো মনে করে। আজ ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে তাদের আসল রূপ প্রকাশ পেয়েছে। আজ তারা “আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআ”দের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। প্রথম শাসক ছিল হাফিজ আল আসাদ, তার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় শাসক বাশার আল আসাদ। কিন্তু আরবদের বিভিন্ন পশ্চিমা দালাল মিডিয়াতে নিজের “কালব্যিয়া” বা “কাল্ব” গোত্রের পরিচয়কে গোপন করে কুরাইশ বংশের পরিচয়কে বাশার আল আসাদ বার বার সামনে আনছে (হাদিসে এসেছে কালব গোত্রের কুরায়েশী ব্যক্তি) এবং রাসুল (সাঃ) এর কুরাইশ বংশের ধোঁয়া তুলে বর্তমান মুসলিম জাহানের অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের সহজেই পথ ভ্রষ্ট করছে।
এমনকি সিরিয়ার এই বনু কালব গোত্রীয় শাসক বাশার আল আসাদ গত ২১ শে আগস্ট ২০১৩ সালে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে দামেস্কের আল গুতা শহরে। এই ‘আল গুতা’ হাদিসের বর্ণনা হিসাবে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ, সিরিয়ার দামেস্কের “আল গুতা” নামক স্থানটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বর্ণিত “মালহামা” (মহাযুদ্ধে) একটি বড় ভূমিকা রাখবে,যেই যুদ্ধের নেতৃত্ব দিবেন ইমাম মাহদী।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাঁবু (ফিল্ড হেডকোয়ার্টার) হবে সিরিয়ার সর্বোন্নত নগরী দামেস্কের সন্নিকটস্থ আল গুতা নামক স্থানে।”
(সুনানে আবি দাউদ,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১১; মুসতাদরাকে হাকেম,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৫৩২; আল মুগনী,খণ্ড ৯,পৃষ্ঠা ১৬৯)
আল গুতা সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্ক থেকে পূর্ব দিকে প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি অঞ্চল। মহাযুদ্ধের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দামেস্কের সন্নিকটস্থ আল গুতা নামক স্থানে ইমাম মাহদী এর হাতে থাকবে।
সমস্ত দাজ্জালি মিডিয়া এই রাসায়নিক অস্ত্রের বিষয়টিকে এমনই বিতর্কিত করে তুলেছে যে, আল গুতা  তো দূরের কথা, রাসায়নিক অস্ত্র আদৌ বাশার আল আসাদ এর বাহিনী মেরেছে কিনা সেটাই এখন ধোঁয়াশা হয়ে গেছে। আর এই বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদকে তো ইতিমধ্যেই পশ্চিমা  দাজ্জালি মিডিয়া এবং বিভিন্ন ভূখণ্ডের দালাল মিডিয়া একে “যৌন জিহাদ” বলে অপপ্রচার করে অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের পথ ভ্রষ্ট করার চেষ্টা চালিয়েছে।
হাদিসে মিনায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে বলা হয়েছে। এত বড় একটি ঘটনা হঠাৎ ঘটে যাবে না। বরং ইসলামের শত্রু কাফেররা (ইহুদী খৃষ্টান ও মূর্তিপূজারীরা) আগে থেকেই এর প্রস্তুতি নিয়ে রাখবে এবং তাদের অনুগত দাজ্জালি মিডিয়ার দ্বারা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অপপ্রচারটিই চালাবে। মিডিয়ার স্ক্রলে ব্রেকিং নিউজ হবে হয়তোঃ “হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা।” তাদের অপপ্রচারের নমুনাটি নিম্নরূপ হতে পারেঃ
খবর পাঠকঃ আমরা এই মাত্র খবর পেলাম হজ্জ চলাকালীন মুসলমানদের উপর মক্কা শরীফে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে আমরা সেখানে আমাদের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ (অথবা একটি আরব মুসলিম নাম) এর সাথে সরাসরি কথা বলব।….হ্যালো, আবদুল্লাহ শুনতে পাচ্ছেন?
আবদুল্লাহঃ হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি।
খবর পাঠকঃ মিনাতে ঠিক কি হচ্ছে এবং কারা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে?
আবদুল্লাহঃ মক্কার মিনা প্রান্তরে হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়েছে……। ওখানে ভয়ানক হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে…। হাঙ্গামার কারণ এখনও অজানা…। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, এর পিছনে ঐ সকল সন্ত্রাসীরাই জড়িত, যারা ইতিপূর্বে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরিয়ে আসছে … এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসছে। মিনা প্রান্তরে অসংখ্য হাজীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। লাশগুলো রক্তের বন্যায় ভাসছে। আমি যে সকল জীবিতদের সাথে কথা বলেছি, তাদেরকে অনেকেরই হজ্জের সামানা লুণ্ঠিত হয়েছে।
খবর পাঠকঃ আব্দুল্লাহ, কাবা শরীফের এই মুহুর্তে ঠিক কি অবস্থা?
আবদুল্লাহঃ উপস্থিত সন্ত্রাসীরা আল্লাহর পবিত্র ঘর কা’বা শরীফ দখল করে নিয়েছে এবং কা’বা শরীফের আশেপাশের হাজীদেরকে বন্দি করে ফেলেছে। সন্ত্রাসীরা এই হাজীদেরকে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। বন্দিদের মধ্যে ছোট ছোট শিশু এবং অজস্র নারী বিদ্যমান। চারপাশ থেকে চিৎকার ও কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সাহায্যের জন্য শিশুরা চিৎকার করে আহ্বান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সকল সন্ত্রাসীদের মধ্যে মার্কিনবিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও বিদ্যমান…… যাদেরকে খুঁজে বের করার জন্য আগে থেকেই অপারেশন জারি ছিল…… সন্ত্রাসীদের ধর্ম বলে কিছু নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই সন্ত্রাসীদের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মতো হবে। (ইমাম মাহদীর আগমন ও  ৩১৩ জনের বাইয়াত গ্রহণের ঘটনা আড়াল ও সন্ত্রাসী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়া)।
সংবাদ পাঠকঃ  আবদুল্লাহ আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা আবার আপনার সাথে পরে যোগাযোগ করব। এইমাত্র আমাদের হাতে খবর এসে পৌঁছেছে যে, মক্কা শরীফকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জর্ডান ও মার্কিন সেনাদের নিয়ে গঠিত শান্তিরক্ষা বাহিনী যাত্রা শুরু করেছে। (তবে জোটবদ্ধ এই বাহিনীর পরিণামে কি হয়েছে, তা গোপন করা হবে)।
ইমাম মাহদীর দলকে ধ্বংস করতে যাওয়া বাহিনীর বায়দা প্রান্তরে মাটির নিচে ধ্বসে যাওয়ার যে কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সে পরিস্থিতি নিয়ে মিডিয়ার মিথ্যা, বানোয়াট, ধোঁকা এবং জাদুময়ী অপপ্রচারের আন্দাজ আপনি করতে পারেন।
সারা বিশ্বের জনসাধারণকে মিনার প্রান্তরের বিভিন্ন লাশের ছবি বার বার বিভিন্ন চ্যানেলে টিভি স্ক্রিনে দেখানো হবে আর ইমাম মাহদীকে পুরো ঘটনার জন্য দায়ী করে ‘স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসী’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলতে থাকবে। আর সাথে থাকবে সুন্নতি লেবাসধারী সরকারী/দরবারি আলেমদের কুরআন হাদিসের আলোকে পুরো ঘটনার অপব্যাখ্যাওয়ালা টক শো।
আমরা ইতিমধ্যেই প্রত্যক্ষ করেছি, বিভিন্ন ভূখণ্ডে কিভাবে কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দিয়ে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে দাজ্জালি মিডিয়ার মাধ্যমে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে সাধারণ মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে। আর এটি তো আরও অনেক বড় ব্যাপার। মিডিয়ার চালে চলমান এমন অপেক্ষাকৃত উদাসীন, শেষ জামানার আলামত সম্পর্কে অজ্ঞ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমান নামধারীরা সেদিন ইমাম মাহদীর কথা মানা তো দূরের কথা, এদের মুখ থেকে কি ধরনের সব প্রতিক্রিয়া বের হতে থাকবে …… এর আন্দাজ করা কঠিন নয়।
পক্ষান্তরে ঐ সকল ব্যক্তি যারা বিবিসি/সিএনএন এর মতো পশ্চিমা দাজ্জালি মিডিয়া ও তাদের বিভিন্ন ভাষাভাষী দালাল মিডিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, সত্যকে গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র কাউকে ভয় করে না, কারও সাথে আপোষ করে না, যাদের অন্তর সদা হক্ক গ্রহণে উন্মুখ – তারা যদি পাহাড়ের গর্তেও অবস্থান করে, ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের জ্ঞান তাদের ঠিকই হয়ে যাবে।
যেহেতু “রিসালাত আল খুরুজ আল মাহাদি” কিতাবের ১০৮ পৃষ্ঠায় এসেছে, “১৪০০ হিজরির পরে মানুষ ইমাম মাহদীকে ঘিরে একত্রিত হবে” (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
আর “আসমাল মাসালিক লিয়্যাম মাহাদিয়্যা মালিকি লি কুল্লু-ইদ দুনিয়া বি ইম্রিল্লাহিল মালিক” কিতাবে কালদা বিন জায়েদ ২১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেছেনঃ “১৪০০ হিজরির সাথে আরও বিশ বা ত্রিশ বছর যোগ কর। এরপরে কোন এক সময়ে মাহদীর আবির্ভাব হবে…”। (এটি হাদিস নয়, কিতাবটিও কোন সনামধন্য কিতাব নয়, সতর্কতার জন্য উল্লেখ করা হয়েছে)
তাই বর্তমান ১৪৩৫ হিজরিতে এসে সামনের দিনগুলো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তার উপর উপর সিরিয়াতে বনু কালব গোত্রের দ্বিতীয় শাসক (দ্বিতীয় সুফিয়ানি) এবং তার বর্তমান কার্যক্রম।
হযরত আরতাত (রাঃ) বলেন, “দ্বিতীয় সুফিয়ানির জামানায় বিকট এক আওয়াজ আসবে। আওয়াজটি এতই বিকট হবে যে, প্রত্যেক গোত্রই মনে করবে – তাদের নিকটবর্তী লোকেরা ধ্বংস হয়ে গেছে।”  (আল ফিতান, ৮৫০)
তাই, কোন উপসংহারে না পৌঁছালেও বিশ্বাসী বান্দা হিসাবে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি থাকবে হাদিসে বর্ণিত মুসলিম ভূখণ্ডগুলোর প্রতিটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সর্বোপরি সামরিক পরিস্থিতির উপর।

নারী জাতির জন্য দাজ্জালি শক্তির জাল

দাজ্জালি শক্তি মুসলিম নারীদের জন্য ভয়ানক জাল তৈরি করেছে এবং এ জালে শিকারীকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে চমৎকার সব ধ্বনি দিয়ে তা সাজিয়ে রেখেছে। তারা ভালো করেই জানে যে, মুসলিম নারীজাতি যদি এ জালে ফেঁসে যায়, তবে মুসলিম পুরুষজাতিকে পরাজিত করা তাদের জন্য কঠিন কিছু হবে না। কেননা, মুসলিম নারীগণ ইসলামকে রক্ষার জন্য যুগে যুগে বড়ত্ব ও বাহাদুরীর স্বাক্ষর রেখেছে। যেখানেই ইসলামের উন্নতি সাধনে পুরুষগণ প্রতিযোগিতামূলকভাবে অংশগ্রহণ করেছে, সেখানে নারীগণও কোন অংশে পিছিয়ে রয়নি। এমনটি কখনও হয়নি যে, পুরুষগণ রণাঙ্গন বিজয় করে ফেলেছে সাথে সাথে নারীদের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা সেখানে পরিলক্ষিত হয়নি। বরং এক সময় তো এমনটি হয়েছে যে, মুসলিম পুরুষদের সেনাদল একের পর এক পরাজয় বরণ করতে লাগল এবং শত্রুরা মুসলমানদেরকে ধারাবাহিকভাবে পরাভূত করছিল। মুসলিম দেশগুলোকে একের পর এক কাফেররা বিজয় করছিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত সেখানে না মসজিদ বাকি ছিল না মাদ্রাসা – কাফেররা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছিল। মাদ্রাসাগুলোকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উলামাদেরকে জীবিত দাফন করে দেওয়া হয়েছিল। মসজিদগুলোকে মদের আড্ডাখানায় রূপান্তরিত করা হয়েছিল। ইসলামী নামকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। প্রত্যেক মুসলমানকে জোরপূর্বকভাবে মুরতাদ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে পুরুষদের সাহস ভেঙ্গে গিয়েছিল। কিন্তু এমন কঠিন ও নাজুক পরিস্থিতিতেও মুসলিম মহিলাগণ সাহস না হারিয়ে স্বীয় প্রতিশ্রুতিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আল্লাহর তরফ থেকে দেওয়া দায়িত্বসমূহকে পালন করেছিল। তারাই ঘরের আঙ্গিনায় বসে বসে নিভু নিভু করতে থাকা ইসলামের আলোকে জ্বালিয়ে রেখেছিল। সন্তানদের সিনায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কালেমা জীবিত রেখেছিল এবং শিখিয়েছিল যে, তারা মুসলিম জাতি।
দাজ্জালি শক্তি মুসলিম মহিলাদেরকে এ ভয়ানক জালে ফাঁসানোর জন্য একটি বাণী আবিস্কার করেছে যে, মহিলাগণ যদি ঘর থেকে বের না হয়, তবে সামাজিক উন্নতি সম্ভব নয়। মনোবৃত্তির পূজারী পুরুষগণ প্রত্যেক যুগেই নারীদেরকে কলঙ্কিত করে আসছে। নারীরা যতই তাদের বাণী, কার্যক্রম এবং ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা রাখবে, ততই তাদের দুঃখ দুর্দশা, কষ্ট ও অপমানের সম্মুখীন হতে হবে। এ ব্যাপারে কুরআন হাদিসে এতকিছু বর্ণিত রয়েছে যে, বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের জন্য এর চেয়ে বেশি কিছুর দরকার নেই।
কিন্তু মডার্ন (দাজ্জালি) সংস্কৃতির জাদু যেহেতু মহামারীর আকার ধারণ করেছে, সেহেতু সমাজের মা ও বোনদের জন্য (যারা পশ্চিমা বিশ্বের দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবীদের বানীগুলোকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন) দার্শনিক ও সাহিত্যিক খলিল জিবরানের নিম্নোক্ত বাক্যগুলো পেশ করা হলঃ
Modern woman,
Modern civilization has made woman a little wiser, but it has increased her suffering because of man’s covetousness. The woman of yesterday was a happy wife but the woman of today is a miserable mistress. In the past she walked blindly in the light, but now she walks open-eyed in the dark. She was beautiful in her simplicity and strong in her weakness. Today she has become ugly in her, ingenuity, superficial and heartless in her knowledge” (A Third Treasury of Khalil Gibran, P: 144)
হে প্রিয় মা ও বোনেরা! আপনাদের এবং আপনাদের সন্তানদের ধ্বংসের জন্য দাজ্জালি শক্তি কি কি কার্যক্রম শুরু করেছে, এগুলো একটু লক্ষ্য করুনঃ
“আপনি হয়ত খেয়াল করে থাকবেন, পশ্চিমারা প্রায়শই নানাবিধ অধিকারের নামে বাচ্চাদের কোলে নেওয়া, তাদের লালন পালন করে বড় করা, বাচ্চাদের সাথে পিতামাতার ব্যবহার, মায়ের সুস্থতা, বাচ্চাদের স্বাধীনতা এবং চারিত্রিক ও ধর্মীয় দিক থেকে বাচ্চাদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করে থাকে। তাদের ভাষ্যমতে, পিতামাতাকে সন্তানের প্রতি কোনরূপ ধর্মীয় বিষয় গ্রহণের জন্য বাধ্য করা ঠিক নয়। পিতামাতার উচিত তার সন্তানকে ধর্মীয়, চারিত্রিক ও আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা।
বাচ্চাদের সর্ব বিষয়ের বইপুস্তক, পত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন অধ্যায়ন করার স্বাধীনতা থাকা চাই। এমনকি সে যদি অশ্লীল বা যৌন বিষয়ক ম্যাগাজিন ক্রয় করতে চায়, তবে এটাও তার মৌলিক অধিকার। পিতামাতাকে বাচ্চার ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনরূপ হস্তক্ষেপ না করা চাই। পাশাপাশি অশ্লীলতার এ কাজগুলো যদি সে মুখের দ্বারা বা লেখালেখির দ্বারা প্রচার করতে চায় বা টিভি/ইন্টারনেটের মাধ্যমে বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করতে চায়, তাহলে এসব কাজেও তার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা উচিত।
স্বাধীন নিরাপদ যৌনসম্পর্ক, এ বিষয়ে তথ্যাবলী, যোগাযোগ মাধ্যম এবং যৌন শিক্ষা সহজকরণ – এ বিষয়গুলো প্রতিটি উন্নয়নশীল সমাজকে অনুসরণ করতে হবে। নারীগণ তাদের গর্ভ রাখবে না নস্ট করে দেবে, এটাও তাদের মৌলিক অধিকার। পাশাপাশি এমন অবৈধ সন্তান ও অবিবাহিত নারীদের এমনই সামাজিক অধিকার প্রদান করতে হবে, যেমনটি অন্যদের প্রদান করা হয়।
উপরোক্ত বিষয়াবলীতে যদি পিতামাতা সন্তানের সাথে জবরদস্তিমূলক কোন আচরণ করে, তবে সন্তানের অভিযোগে পিতামাতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। অসদাচরণের ক্ষেত্রে মারধর ছাড়াও ধর্মীয় শিক্ষা দীক্ষায় সন্তানকে বাধ্য করার বিষয়টি শামিল।”
এ ধারনাগুলো পড়ার পর নিশ্চিতভাবেই মুসলিম বিশ্বের মায়েরা কেঁপে উঠবেন। কিন্তু সারা বিশ্বের কাফের সম্প্রদায় আমাদের ঘরে এমনই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। আমাদের ঘরের ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা যে, যেমনভাবে তাদের ঘরগুলোতে অশান্তির আগুন লেগেছে, তেমনি আমাদের ঘরগুলোতেও এ আগুন লেগে যাক।
বর্তমান সময়ে দাজ্জালি শক্তিসমূহের সার্বিক প্রচেষ্টা, দিন রাত মেহনত এবং নতুন কার্যক্রম বাস্তবায়নের প্রেক্ষিতে একটি কথা অবশ্যই বুঝে আসে যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের সবচেয়ে বেশি জোর দুটি বিষয়ে –
একঃ মুসলিমভূমিগুলোতে আগ্রাসন। এ বিষয়কে তো সারাবিশ্বের মুজাহিদীনগণ সামলে নিয়েছেন।
দ্বিতীয়ঃ আনেওয়ালা প্রজন্ম। আর এ বিষয়টিতে মুসলিম মহিলাগণ দায়িত্বশীল।
আর তাই তাদের বর্তমান টার্গেটটি হচ্ছে মুসলমানদের ঘরকেন্দ্রিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে, এবার কাফেররা তাদের সকল সৈন্যসামন্ত মুসলিম মহিলাদের বিরুদ্ধে নামিয়েছে। তাদের সর্বপ্রথম লক্ষ্য হচ্ছে – মুসলমানদের সামাজিক পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া, যেমনটি ইউরোপ-আমেরিকায় করা হয়েছে।
পশ্চিমা ধাঁচে ফ্যাশন, নারী স্বাধীনতা, পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার অঙ্গীকার, ঘরের বাইরে গিয়ে দুনিয়ার হাঙ্গামায় পুরুষদের সাহচর্য প্রদান ইত্যাদি ব্যাপারগুলো ঐ সকল ইউরোপ আমেরিকান সভ্যতায় নিমজ্জিত করার মত ব্যাপার, যার মধ্যে একজন মহিলা প্রবেশ করার পর চিরদিনের জন্য সে পুরুষদের খেলনা হয়ে যায়।
আর এগুলোকে পূর্ণতায় রূপ দেওয়ার জন্য আমাদের আধুনিক শিক্ষিত মা বোনদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করে – “ধর্মীয় বিষয়গুলো তো এখন পুরাতন হয়ে গেছে”, “বর্তমান আধুনিক যুগে এগুলো অচল” ইত্যাদি। অথচ যেখানে আমাদের এই সব আধুনিক শিক্ষিত মা বোনরাই পারত ধর্মীয় গণ্ডির ভেতরে থেকে যুগোপযুগী দ্বীনের চৌকস খাদেম উপহার দিতে। যারা একদিকে হতো কুরআনে হাফেজ, দ্বীনের আলেম আর অন্যদিকে হতো প্রযুক্তিবিদ।

দাজ্জাল ও সম্পদ কুক্ষিগতকরণ

বর্তমানে পৃথিবীর সমস্ত খনিজ উপাদানের উপর প্রত্যক্ষভাবে হোক কিংবা পরোক্ষভাবে হোক ইহুদীদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত।
আপনি হাদিসে পড়েছেন, দাজ্জালের কাছে সম্পদের অসংখ্য পাহাড় থাকবে। তারই প্রস্তুতি হিসাবে ইহুদীরা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে। পৃথিবী থেকে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ডকে বিলুপ্ত করে সোনাকে নিজেদের কব্জায় নিয়ে তারা বিশ্ববাসীর হাতে রং বেরঙয়ের কাগজের টুকরা (কারেন্সি নোট, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি) ধরিয়ে দিয়েছে। এগুলোকে ইহুদী দাসত্বের শিকলে ফেঁসে যাওয়া বিশ্ব নোট কিংবা সম্পদ মনে করে থাকে। তবে এই আত্মপ্রবঞ্চনা ও ঘোর শীঘ্রই কেটে যাবে। বরং এখন তো মানুষের হাত থেকে নোটও ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং হাতে প্লাস্টিকের কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অদূরদর্শী মানুষ প্লাস্টিকের কার্ডটি হাতে নিয়ে নিজেকে কোটিপতি, মিলিয়ন-বিলিয়নপতি ভাবছে।
কম্পিউটারের কীবোর্ডের সামনে বসে হাতের আঙ্গুলের ইশারায় কোটি টাকার হিসাবকারী সেদিন কি করবে, যেদিন কিবোর্ড টিপতে টিপতে আঙ্গুল ক্লান্ত হয়ে যাবে, কিন্তু নিজের অনলাইন একাউন্টের হিসাব মিলবে না? এমন পরিস্থিতির এমন একটা ঝলক গেল কিছুদিন আগে বিশ্ব অর্থমন্দার আলোকে বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। যেটি ছিল ইহুদী মস্তিস্কের সৃষ্ট ফসল এবং দাজ্জালি শক্তির আন্তর্জাতিক পরিকল্পনার একটি অংশ। কোন কোন দেশ শেয়ার বাজারের দরপতনের মতো ঘটনায়ও দেখেছেন কিভাবে চোখের সামনে ডিজিটাল স্ক্রিনে কেনা শেয়ারের বিপরীতের মোটমূল্য নামতে থাকে। তাই মুসলমান ব্যবসায়ীদের প্রতি পরামর্শ, আপনারা নিজেদের কাছে রঙ বেরঙ এর কাগজের টুকরো জমানোর পরিবর্তে সোনা রুপা জমান। অন্যথায়, অতিশীঘ্র সমুদয় সম্পদ থেকে হাত ধুয়ে নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন।
ইহুদীরা ইতিমধ্যেই বড় বড় কোম্পানিগুলোকে নিজেদের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। এখন তারা এর পরের ধাপে চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন শপিং মলের লিমিটেড কম্পানি খুলে বড় বড় শহরগুলোতে দৈনন্দিন বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এই দুটি প্রতিষ্ঠান সমগ্র পৃথিবীকে বর্তমানে নিজেদের দাস বানিয়ে রেখেছে এবং বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন ও গঠনের পরিকল্পনা এখানেই প্রস্তুত হয়। আপনি যদি এই দুই প্রতিষ্ঠানের ঋণ চালু করা এবং পরিশোধ করার পদ্ধতিগুলো গভীরভাবে জানেন, তাহলে দাজ্জালের আবির্ভাবের আগে কিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিকে অর্থনৈতিক দাস বানাতে হয়, বুঝতে পারবেন।
অপরাপর সম্পদের পাশাপাশি ইহুদীদের দাজ্জালি শক্তি মানবসম্পদের কুক্ষিগতকরণেও পিছিয়ে নাই। তাই তারা তাদের শত্রু মুসলমানদের হয় পঙ্গু বানিয়ে ফেলছে, না হয় নিজেদের নিয়ন্ত্রিত দেশে ডেকে নিয়ে তাদেরকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। আলেম বলুন আর মুসলমান প্রযুক্তিবিদ বা চিন্তাবিদ বলুন, এমন প্রতিজন মুসলমানের উপর তারা চোখ রাখছে। এদের মধ্যে বহুসংখ্যক মুসলমানদের মাথা ক্রয় করে নিয়েছে। তৈরি করছে দরবারী আলেম আর মুসলিম নাম সদৃশ ইসলাম বিরোধী চিন্তাবিদ। যাদেরকে ক্রয় করতে পারেনি তাদেরকে ‘সন্ত্রাসী’ লেবেল দিয়ে হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এমনকি এক্ষেত্রে তারা নিজ দেশের নাগরিকের ক্ষেত্রেও পিছ পা হয়নি। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশেও সত্যাশ্রয়ী আলেমগণের গণহত্যা এই ধারারই একটি অংশ বিশেষ। যার কারণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আলেমদের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তাদেরকে এমনভাবে হত্যা করা হবে, যেভাবে চোরদেরকে হত্যা করা হয়। আহ, সেদিন আলেমরা নির্বোধের ভান ধরত যদি।” (আস সুনানুল অয়ারিদাতু ফিলফিতান খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৬১; আত তাকরীব খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৩১; আল মীযান খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৩৩৪)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, “আমি সেই সত্ত্বার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, নিঃসন্দেহে আলেমদের জীবনে এমন একটি সময় আসবে, যখন তাদের কাছে লাল সোনার চেয়েও মৃত্যু বেশি প্রিয় হবে। তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কবরের কাছে গেলে বলবে, হায়, এর জায়গায় যদি আমি হতাম”। (মুসতাদরাকে হাকেম, পৃষ্ঠা ৮৫৮১)
যদিও উম্মতের এই বিজ্ঞ আলেমদের হত্যাকাণ্ডকে নানা মহল আপন আপন দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যায়ন করছে । অথচ এই হত্যাকাণ্ডকে হাদিসে রাসুলের আলোকে মূল্যায়িত করা আবশ্যক ছিল।
বর্তমানে সত্যের মোকাবিলায় মিথ্যা চূড়ান্ত যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছে। ইবলিসিয়াত সর্বত্র প্রকাশ্যে নগ্ন নাচ নাচতে চাইছে। মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের বোধ বিশ্বাস ও চেতনাকে হৃদয় থেকে মুছে দিয়ে মানুষদের থেকে দাজ্জালিয়াত ও ইহুদিয়াতের “নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার” এর সম্মতি আদায়ের প্রচেস্টা ও পাঁয়তারা চলছে।
এমতাবস্থায় যারা ইবলিশের ইঙ্গিত ও পরামর্শে কাজ করছে, তারা সত্যের এই সুউচ্চ মিনার ও আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকগুলোকে সহ্য না করারই কথা, যাদের আঙ্গুলের একটি ইশারায়, কলমের একটি খোঁচায় দাজ্জালের শক্ত প্রাচীরে ফাটল ধরিয়ে দিতে সক্ষম। মিথ্যার আতঙ্ক এই আলেমগন এ যুগেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র সেই মর্মই বর্ণনা করতে বদ্ধপরিকর, যার ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছিল আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে সাফা পাহাড়ে।
কাজেই দাজ্জালের ‘এডভান্স ফোর্স’ এদের কি করে সহ্য করতে পারে!

বানিজ্যখাত নিয়ে দাজ্জালি চক্রান্ত

যে সকল সংস্থা পিছনের দরজা দিয়ে বিশ্বের বানিজ্য ব্যবস্থাকে গুটি কয়েক কর্পোরেশনের অধীনস্থ করার ব্যাপারে তৎপর তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন। এটি হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিভিন্ন ভাবে আন্তর্জাতিক বানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে । আন্তর্জাতিক বানিজ্য আইন প্রনয়ন, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত দন্দ্ব সমাধান, শুল্ক নিয়ন্ত্রন, সকল বানিজ্যের খোজ খবর রাখা ইত্যাদি হলো এই সংস্থার কাজ।
আপাত দৃষ্টিতে এদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বেশ ভালো। তাদের কথা মতে তাদের উদ্দেশ্য হলো বানিজ্যে বৈষম্যহীনতা,স্বচ্ছতা,প্রতিযোগিতা মূলক পরিবেশ সৃষ্টি,উন্নয়নশীল দেশ গুলির জন্য সুবিধা সৃষ্টি,পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তাদের কার্যক্রম বেশ নেতিবাচক তারা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ঠিক উল্টোটাই করে থাকে। নিচে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
যদিও বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা এর সিদ্ধান্ত এই বিশ্বব্যাপী সমাজের সকল স্তরে প্রভাব ফেলে,সারা বিশ্বের প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এর কমিটি গঠিত হয়না। কিছু প্রভাবশালী দেশের প্রভাবশালী কর্পোরেশন এর প্রতিনিধি বৃন্দের মাধ্যমে এর বিভিন্ন কমিটি গঠিত হয়। নীতি নির্ধারণী বৈঠক গুলিও গোপনীয় ভাবে সম্পাদিত হয়। এই বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা এর কেন্দ্রীয় কমিটি প্রভাবশালী দেশগুলোর আয়ত্তে থাকার ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ তেমনভাবে রক্ষিত হয়না। বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত উন্নত দেশগুলির পক্ষেই হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশ গুলি এর ফলে হয় বঞ্চিত। WTO এর বিভিন্ন পলিসি স্থানীয় ছোট ব্যবসা ও কৃষি প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর কিন্তু বড় বড় আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন এর জন্য সুবিধা বয়ে আনে।
বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা কর্পোরেশন গুলোর মুনাফা অর্জনকে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার উপর অগ্রাধিকার দেয়। তারা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের পরিবর্তে তাদেরকে অসম প্রতিযোগিতাতে লিপ্ত হতে বেশি উত্সাহিত করে। তাদের পলিসি অনুযায়ী প্রোডাক্ট উত্পাদন করার সময় যদি শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনও হয় তাহলেও সেটিকে সরকার ধর্তব্যে আনতে পারবেনা প্রতিযোগিতামূলক উত্পাদনই এখানে বেশি অগ্রাধিকার পায় ।
বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা GATS চুক্তির মাধ্যমে জনসাধারনের অত্যাবশ্যকীয় ১৬০ টি পরিসেবা যেমন বৃদ্ধ ও চাইল্ড কেয়ার, সেউএজ ও আবর্জনা নিষ্কাশন, পাবলিক প্রপার্টি রক্ষণাবেক্ষণ, টেলিযোগাযোগ, নির্মাণ, ব্যাংক, বীমা, পরিবহন, শিপিং, ডাক ইত্যাদি নানাবিধ পরিসেবাকে বেসরকারী করতে চায় । ধনীরা এর মাধ্যমে তেমন প্রভাবিত না হলেও গরিব মানুষ এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হয় । ফলে অসমতা সৃষ্টি হয় । এসব পরিসেবা বিদেশী বড় বড় কোম্পানির আয়ত্বে চলে যায় । ফলে জাতীয় সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুক্ষীন হয় ।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশ রক্ষার জন্য নানা ধরনের আইন আছে, কোনো পণ্য উত্পাদন করার সময় সেসব আইন মেনে চলতে হয় যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয় । বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা এসব আইন কে “barriers to trade” বলে অবৈধ ঘোষণা করে । যেমন তারা সর্বপ্রথম “US Clean Air Act” কে অবৈধ ঘোষণা করে । তাদের মতে পণ্য উত্পাদনের জন্য পরিবেশ বান্ধবতার জন্য যদি কোনো বাধার সৃষ্টি হয় তবে তারা পরিবেশের উপর পণ্য উত্পাদন কে বেশি অগ্রাধিকার দেয় ।
পৃথিবীর অনেক অনুন্নত দেশে নানা রকম রোগ বালাই আছে যেমন আফ্রিকায় আছে AIDS এর প্রাদুর্ভাব । এ সত্তেও “Trade Related Intellectual Property” এর নামে এসব দেশে লাইফ সেভিং ড্রাগস্ উত্পাদন করতে তারা বাধার সৃষ্টি করে – যাতে এসব দেশ ওষুধ উন্নত বিশ্ব থেকে কিনতে বাধ্য হয় । এর ফলে এসব ওষুধ হয়ে যায় দুষ্প্রাপ্য ও দামী । ফলে ওষুধের অভাবে প্রতি বছর মারা যায় অসংখ্য মানুষ ।
পৃথিবীর ধনী ২০% পৃথিবীর ৮৬% রিসোর্স ব্যবহার করে আর  গরিব ৮০% বাকি ১৪% ব্যবহার করে । বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা এর কমিটি গুলিতে ধনী দেশ গুলির প্রতিনিধি থাকার ফলে তাদের বিভিন্ন পলিসির মাধ্যমে এই বৈষম্য দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে । উন্নয়নশীল দেশ গুলিকে নিয়ম কানুন, শুল্ক, পলিসি ইত্যাদি নানা ফাদে ফেলে বিভিন্ন ভাবে বাণিজ্য করতে বাধা প্রদান করা হয় ও উন্নত দেশগুলির পণ্য খুব সহজেই ক্রয়-বিক্রয় হয়। ফলে গরিব দেশ গরিবতর হয়, ধনী দেশ হয় আরো ধনী । বিভিন্ন ট্রেড আলাপ-আলোচনা/নেগসিয়েশন কিংবা পলিসি নির্ধারণ রুদ্ধদার বৈঠকের মাধ্যমে হয় – অনেক সময় উন্নয়নশীল দেশ গুলিকে এইসব বৈঠক জানানো পর্যন্ত হয়না, সিদ্ধান্ত তাদের মাথার উপর চাপিয়ে দেয়া হয় ।
বিশ্বে যত মানুষ আছে তাদের সকলের চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট খাদ্য এই পৃথিবীতে উত্পাদিত হয় । অথচ খাদ্য বন্টনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন এর নিয়ন্ত্রণ থাকার জন্য পৃথিবীর ৮০০ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্যাভাব ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থা “Agreement on Agriculture” এর মাধ্যমে এসব কর্পোরেশন কে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার দেয় ।

Wednesday, 17 July 2019

দাজ্জাল ও খাদ্য উপকরণ

দাজ্জাল আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এমন একটি পরীক্ষা হবে, যার মাধ্যমে ঈমানদারদেরকে যাচাই করা হবে, তারা আল্লাহর ওয়াদার উপর কতটুকু বিশ্বাস রাখে। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে, তাদের জন্য আল্লাহ অনেক মর্যাদা ও প্রতিদান বরাদ্দ রেখেছেন। এ কারণেই দাজ্জালকে সব ধরনের উপকরণ প্রদান করা হবে।
দাজ্জাল সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, তার কাছে বিপুল পরিমাণ খাদ্য উপকরণ থাকবে। সে যাকে ইচ্ছা খাদ্য দিবে, যাকে ইচ্ছা না খাইয়ে মারবে। বর্তমানে পৃথিবীতে বাৎসরিক আয়ের দিক দিয়ে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানিটির নাম ‘নেসলে’। এই প্রতিষ্ঠানটি ইহুদী মালিকানা এবং এদের মিশন সমগ্র পৃথিবীর খাদ্য উপকরণকে নিজেদের মুঠোয় নেওয়া।
এই কোম্পানিটি বর্তমানে খাদ্য উপকরণ, পানীয়, চকলেট, সবধরনের মিষ্টান্ন দ্রব্য, কফি, গুড়োদুধ, শিশুদের দুধ, পানি, আইসক্রিম, সবধরনের আচার ও স্যুপসহ ২৯ টি ব্র্যান্ডের খাবার। ১৯০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক প্রসারতা লাভ করে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। এরপরে প্রসারতার ধারাবাহিকতায় এটি আরও পাঁচটি বিশ্বখ্যাত বড় বড় খাবার কোম্পানিকে কিনে নেয়। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী এই কোম্পানির ৮৬ টি দেশে ৪৫০ টি কারখানায় ৩,২৮,০০০ শ্রমিকসহ মোট কর্মী সংখ্যা ৩,৩৯,০০০ জন।
আর এই বস্তুবাদী ও ভোগবাদী জগত খাদ্য পানীয়র বেলায় নেসলের উপর নির্ভরশীল। আর মুখরোচক রকমারি খাবার মানুষকে অলস বানিয়ে দেয়, শরীরকে স্থূলাকার করে ফেলে আর নানা রোগের জন্ম দেয়। অথচ পরিমিত সাধাসিধে খাবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের সুন্নত। যা আজকাল একমাত্র তাকওয়াপূর্ণ পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষেত্রেই যা মেনে চলা সম্ভব।
নু’আইম ইবনে হাম্মাদ সংকলিত ‘আলফিতান’ –এ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর সূত্রে উল্লেখিত হয়েছে, ‘দাজ্জালের সঙ্গে ঝোল ও এমন গোশতের পাহাড় থাকবে, যা কখনো ঠাণ্ডা হবে না’।
বর্তমান যুগে পৃথিবীতে নানা স্তর অতিক্রম করে খাদ্য ও পানীয় নিরাপদ রাখার জন্য স্বতন্ত্র কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে আছে। এই সকল প্রতিষ্ঠান ‘ফুড প্রসেসিং ও প্রিসার্ভেশন’ নামে ১৮০৯ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ১৮০৯ সালে নিকোলাস অ্যাপার্ট সর্বপ্রথম খাদ্যের প্রিসার্ভেশন পদ্ধতি আবিস্কার করে। এই সকল প্রতিষ্ঠানের কাজই হল খাদ্য ও পানীয় বস্তুকে আধুনিক থেকে আধুনিকতর পদ্ধতিতে সংরক্ষিত করা বিষয়ে গবেষণা করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো এ যাবত বহু সংখ্যক পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলেছে। সেই পদ্ধতিগুলোর কিছু পদ্ধতি এমন, যেগুলোতে খাদ্যকে এক বিশেষ মাত্রার তাপে গরম রেখে সংরক্ষণ করা হয়। স্যুপ, আচার, সবজি, গোশত, মাছ ও ডেইরি সংক্রান্ত বস্তুসমূহ এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। কাজেই এই যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গোশতগুলো গরম হবে এবং ঠাণ্ডা হবে না’ কথাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ।
প্রাকৃতিক খাদ্যদ্রব্য আল্লাহপাক মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিটি ভূখণ্ডে সেখানকার মানুষের মেজাজ,মৌসুম ও ভৌগলিক অবস্থান হিসাবে নানা প্রকার ফলমূল ও শাকসবজি উৎপন্ন করেন। এসকল বস্তুসামগ্রী সেই দেশের নাগরিকদের মালিকানায় ছিল। নিজেদের ক্ষুধা নিবারণে তারা কারও মুখাপেক্ষী হওয়ার কথা ছিল না। নিজেদের উৎপাদিত ফসল নিজেরাই ভোগ করত। কিন্তু আল্লাহর শত্রু ইহুদী গোষ্ঠীর বিষয়টি সহ্য হল না। তারা এই সব উৎপাদনকে নিজেদের হাতে নিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করল। ঠিক এমন, যেন এই গোষ্ঠীটি আল্লাহর অবতারিত মান্না ও সালওয়ায় সন্তুষ্ট না হয়ে অর্থব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সবজি ও ডালের আবেদন জানিয়েছিল, যাতে সম্পদ কুক্ষিগত করে নিজেদের দুষ্ট স্বভাবের প্রকাশ ঘটাতে পারে।
আর এর জন্য তারা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এর মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় এমন আদেশ জারি করিয়ে নিল, যার আওতায় প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রীকে বিভিন্ন রিপোর্টে বিভিন্ন অজুহাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সাব্যস্ত করা হয়েছে। যার ফলে বিশ্ব ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী থেকে দূরে চলে গেছে ও বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর প্রস্তুতকৃত খাদ্য সামগ্রীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশে আটা, ময়দা, সুজি, তেল, ঘি, দুধ, জিরা, মরিচ, হলুদ, বিভিন্ন মসলা থেকে শুরু করে রেডি হালিম, রেডি চিকেন কারী, মাটন কারী, রেডি বিরিয়ানি, রেডি খিচুরি, রেডি ক্ষীর মিক্সসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্য উপকরণ আজ বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল ও স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অধীনে বাজারজাতকৃত। অথচ আজ থেকে ১০০ বছর পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এই সকল প্রাকৃতিক খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী খেয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা দীর্ঘায়ু লাভ করেছেন।
তারা তথ্য প্রকাশ করল, মাটির পাত্রে খাবার খাওয়া ক্ষতিকারক। আর যায় কোথায়! অমনি মানুষ সমাজ থেকে মাটির থালা বাসন পাত্রের ব্যবহার তুলে দিল। কিন্তু মজার বিষয় হল, সেই বাসন ফাইভস্টার হোটেলে পৌঁছে গেল আর বলা হল, এগুলোতে খাওয়ার মজাই আলাদা।
তাই বর্তমানে মুসলমান ডাক্তারদের কর্তব্য হল, আপনারা জাতিকে সে সকল অপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেন, আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির ষড়যন্ত্রের ফলে জাতি আজ যার শিকার। যদিও বর্তমানে সময়টি এমন যে, সত্য বললে আগুন আর মিথ্যার সামনে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তবুও কারও যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকে যে, দাজ্জালের সময়টিতে যেটি আগুন হিসাবে পরিদৃশ্য হবে, সেটিই মূলত শীতল পানি হবে, তা হলে মুসলমান ডাক্তারদের সেই পথটিই অবলম্বন করা দরকার, যেটি তাদের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হবে। আমাদেরকে সব সময়ের জন্য স্মরণ রাখতে হবে, সত্য বলার অপরাধে যে আগুন বর্ষিত হয়, এগুলোই আসলে ফুলবাগান। আর মিথ্যার সামনে মাথানত করার ফলে যে ডলারের বৃষ্টি বর্ষিত হয়, এগুলোই মূলত আগুন।

দাজ্জালের ফিতনা ও ঈমানের হেফাজত

অন্ধকার ফিতনার ভয়ানক প্রতিচ্ছবি দিন দিন মানবতাকে গ্রাস করে চলেছে। ঈমানওয়ালাদের জন্য এটি কঠিন পরীক্ষার মুহূর্ত। কুফরের পক্ষ থেকে এদিক বা ওদিক...